নোটবন্দি, জিএসটি’র জোড়া ফলাতেই পিছিয়ে পড়েছে ভারতের আর্থিক বিকাশ

মনে করেন রঘুরাম রাজন

ওয়াশিংটন : বিমুদ্রাকরণ এবং জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর। এই জোড়া ফলাতেই কুপোকাত হয়েছে ভারতের অর্থনীতি। এমনটাই মনে করেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। এরই পাশাপাশি ভারতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার 'অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ' নিয়েও সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি।

শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার এক সেমিনারে অন্যতম বক্তা ছিলেন রাজন। 'ভারতের ভবিষ্যৎ' শীর্ষক ওই সেমিনারে তিনি বলেছেন, ভারতের আর্থিক অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিয়েছে পিঠোপিঠি দুটি আঘাত। এক, বিমুদ্রাকরণ। দুই, জিএসটি। এবং এমন একটা সময়ে এই জোড়া ফলার আঘাত এসেছে, যখন গোটা বিশ্বের আর্থিক বিকাশের সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়চ্ছিল ভারত। কিন্তু আচমকাই সেই অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে বিমুদ্রাকরণ ও জিএসটি। কোনওরকম রাখঢাক না করেই মন্তব্য রাজনের।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মোদি সরকার। প্রথম দিন থেকেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি এও বলেছেন, নোট বাতিলের দগদগে ক্ষত ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। সরব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। জিএসটি'কে 'গব্বর সিং ট্যাক্স' বলেও কটাক্ষ করে চলেছেন রাহুল। তার পরেই ভারতের অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ার প্রশ্নে রাজনের মন্তব্য বিরোধীদের মোদি-বধের অস্ত্রে শান দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার ওই সেমিনারে রাজন বলেছেন, ভারতের আর্থিক বিকাশের পর্যাপ্ত পরিসর তৈরি হয়েছিল ২০১২-২০১৬ সালে। আর ঠিক সেই সময়ই ভারতের অর্থনীতিতে দুটি ঝোড়ো-আঘাত সবই ওলটপালট করে দিয়েছে। নোট বাতিল এবং জিএসটি চালুর সিদ্ধান্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে অর্থনীতির সামগ্রিক বিকাশে। স্তব্ধ হয়েছে বিকাশের হার। এর পরেই রাজনের সংযোজন, এটা বাস্তব যে ভারতের মতো শ্রমজীবী বাজার নির্ভর দেশের আর্থিক বিকাশের হার ৭ শতাংশ যথেষ্ট নয়। আত্মতুষ্টিরও কোনও অবকাশ নেই। তা হলেও এই হার ধারাবাহিক থাকলে অর্থনীতির ভিত অনেকটাই মজবুত হতো। কিন্তু পর পর দু'টি ধাক্কা সামলাতে গিয়ে সেই ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন রাজন।

আর এই জোড়া ধাক্কার সন্ধিক্ষণও মোটেও অনুকূলে ছিল না বলে জানিয়েছেন রাজন। তিনি বলেছেন, ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করে। সেই সময় বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত অর্থনীতির সুযোগ নিতে পারত ভারত। সমান্তরালভাবে বাড়তে পারত আর্থিক বিকাশের হার। কিন্তু তখনই বিমুদ্রাকরণ এবং জিএসটি চালু হওয়ায় সেই হারের অধোগতি হয়েছে। অর্থাৎ, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। আর পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে নতুন করে ধাক্কা দিয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। রাজন মনে করেন, সেই ধাক্কা সামান্য হলেও অর্থনীতির অগ্রগতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।