পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের হেনস্তা, গর্জে উঠল দিল্লি


পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের হেনস্তার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাল ভারত। পাকিস্তানে তীর্থ করতে যাওয়া ভারতীয় শিখ পুণ্যার্থীদের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীদের দেখা করতে না দেওয়া নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কর্তারপুর সীমান্ত খোলা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের ঐকমত্যে পৌঁছনোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পর্কের এই ছন্দপতন অস্বাভাবিক ঘটনা। শুক্রবার ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "পাক বিদেশমন্ত্রকের থেকে অনুমতি পাওয়ার পরও ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনের আধিকারিকদের ২১ ও ২২ নভেম্বর নানকানা সাহিব গুরুদ্বার এবং সাচ্চা সৌদায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ভারত এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাকিস্তানের এই আচরণ নিন্দনীয় ও অভিসন্ধিমূলক।" শিখ তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের যোগাযোগ করতে না দিয়ে ইসলামাবাদ ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে সুষমা স্বরাজের মন্ত্রক।

ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর সংশয় প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। এক বিবৃতিতে ভারত সরকার বলেছে, "তীর্থ চলাকালীন অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে এবার যাত্রীদের উপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণ নেমে আসতে পারে। এর দ্বারা ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতাকে আঘাত করার প্রচেষ্টা হতে পারে। ভারত এরকমই আশঙ্কা করছে।"

ভারতীয় কূটনীতিকদের দাবি, পাকিস্তানে পৌঁছনো ভারতীয় শিখ তীর্থযাত্রীদের খলিস্তানকে সমর্থন করে লেখা পোস্টার ও ব্যানার দেখানো হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে উসকানিমূলক আচরণ করা হয়েছে। স্থানীয় পাক প্রশাসনকে থেকে তাঁদের উসকানি দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় শিখরা যেন খলিস্তানের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার সৈয়দ হায়দর শাহকে সাউথ ব্লকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁর হাতে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছে ভারত। তীর্থযাত্রা উপলক্ষে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের গুরদাসপুরের ডেরা বাবা নানক গ্রাম থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুরের কর্তার সাহিব গুরুদ্বার পর্যন্ত কর্তারপুর সীমান্ত শিথিল করার ও রাস্তা তৈরির বিষয়ে অনুমতি দেয় ভারতের মন্ত্রিসভা। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাক প্রশাসনও জানায় যে তারা এই সীমান্ত খুলে দেবে। চার কিলোমিটার বিস্তৃত এই করিডর আন্তর্জাতিক সীমান্তের দুই দিকে দুই কিলোমিটার করে বিস্তৃত।

কয়েকমাস আগে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রকের বৈঠক ভারত বাতিল করে দেওয়ার পর কর্তারপুর সীমান্ত খোলার বিষয়ে এমন পারস্পরিক পদক্ষেপ সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্তাদের প্রতি পাকিস্তানের আপত্তিকর এই আচরণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। গুরু নানকের জন্মের ৫৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার সেখানে গিয়েছিলেন হাজার হাজার শিখ। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি সেখানে কর্মরত ভারতীয় হাই কমিশনের আধিকারিকদের। এমনকি পাক সরকারের অনুমতিপত্র সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও গুরুদ্বারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে গতকালই পঞ্জাব থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পর্যন্ত করিডরে গড়ায় সায় দিয়েছিল কেন্দ্র। এই ঘটনায় তাই স্তম্ভিত নয়াদিল্লি। এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে, জুন মাসে রাওয়ালপিন্ডির হাসান আবদালে অবস্থিত গুরুদ্বার পাঞ্জা সাহিবে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বিসারিয়া এবং তাঁর স্ত্রী।