দীপাবলির আগেই রেলযাত্রীদের জন্য সুখবর, কমছে রাজধানী-সহ দুরন্ত ও শতাব্দীর ভাড়া


একেই বলে বুম্যেরাং! টিকিটের চাহিদা দেখে কিছু ট্রেনে টিকিটের দাম-বৃদ্ধি করার নিয়ম চালু করেছিল রেল। যার ফলে বেশকিছু রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস-এরক মতো প্রিমিয়াম ট্রেনগুলোতে যাত্রার সময় যত এগিয়ে আসত ততই দাম বেড়ে যেত টিকিটের। ফলতই সমস্য়ায় পড়ছিলেন যাত্রীরা। দেখা যেত যে দূরত্ব অতিক্রম করতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগে। সেই একই দূরত্ব ওই ট্রেনে পার করতে যাত্রীকে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। কারণ, তিনি টিকিটটা যাত্রার কয়েক ঘণ্টা আগে অথবা দিন কয়েক আগে কেটেছিলেন। আয়-বৃদ্ধির জন্য রেল এই নিয়ম চালু করেছিল। 

এই নিয়ম যে কতটা বুম্যেরাং হয়েছে তা এখন হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছে রেল। রেলের নয়া এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার' সিস্টেম চালু করার জন্য কী ভাবে দিন দিন ওই সব প্রিমিয়াম ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শেষমেশ এই 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার'-এর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত-ই নিয়েছে রেল। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নিজে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। ফলে, দীপাবলির আগে এমন খবরে রেলযাত্রীদের মুখে হাসি ফুটতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

১৫টি প্রিমিয়াম ট্রেন যেখানে সারা বছর ৫০ শতাংশের কম আসন বিক্রি হয় সেখানে থেকে পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়েছে 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার'। ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ আসন বিক্রি হওয়া ৩২টি প্রিমিয়াম ট্রেনে উৎসবের মুরসুমে এবং যে সময়গুলোতে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সেখানে 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার' প্রয়োগ করা হবে না। এছাড়াও ১০১টি ট্রেনে 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার' টিকিটের দামের উপরে ১.৫ থেকে কমিয়ে ১.৪ শতাংশ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রিমিয়াম ট্রেনে 'ফ্লেক্সি ফেয়ার' চালু করা হয়েছিল। ৪৪টি রাজধানী এক্সপ্রেস, ৫২টি দুরন্ত এক্সপ্রেস ও ৪৬টি শতাব্দী এক্সপ্রেসে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়। এর ফলে এই ট্রেনগুলিতে প্রতি ১০ শতাংশ আসন বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে বেস-ফেয়ারের ১০শতাংশ বেশি ভাড়া প্রয়োগ হত। ফলে, এই সব ট্রেনে ১০শতাংশ আসন বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর যারা টিকিট কাটতেন তাদের বেস-ফেয়ার থেকে ১০ শতাংশ বেশি অর্থ টিকিটের দাম হিসাবে দিতে হত। তবে, ফার্স্ট এসি এবং ইকোনমি ক্লাস-কে 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার'-এর আওতার বাইরেই রেখেছিল রেল।

রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, 'এই উৎসবের মরসুমে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ফ্লেক্সি-ফেয়ারকে ১.৫ থেকে কমিয়ে ১.৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৫০ শতাংশ কম আসন বিক্রি হওয়া ট্রেনে ফ্লেক্সি-ফেয়ার কার্যকর করা হচ্ছে না।' সেইসঙ্গে তিনি জানান, 'উইন-টু-উইন সিচুয়েশনে- ফ্লেক্সি ফেয়ার-এ ছাড় যাত্রীদের ও রেলকে যথেষ্ট সুবিধা দেবে। একদিকে যাত্রীরা যেমন কম দামে টিকিট কাটার সুযোগ পাবেন, তেমনি প্রিমিয়াম ট্রেনগুলিতেও যাত্রী সংখ্য়া বাড়ায় টিকিটের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। '

চলতি বছরের জুলাই মাসে ক্যাগ-এর রিপোর্টেই উঠে আসে যে প্রিমিয়াম ট্রেনে 'ফ্লেক্সি ফেয়ার' কার্যকর করার পর থেকে আসন বিক্রির সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে। সূত্রেও দাবি করা হয় এই প্রকল্পের ফলে রেল অন্তত ১০৩ কোটি টাকার ক্ষতিও বহন করছে। তবে, রেলের আশা 'ফ্লেক্সি-ফেয়ার'-এ ছাড় আনার ফলে এবার এই সব ট্রেনে আসন বিক্রির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ক্ষতির বহরও যেমন কমবে তেমনি অতিরিক্ত আয়ও হবে রেলের।

ইতিমধ্যেই ৩২টি ট্রেনে পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও অগাস্ট-এ 'ফ্লেক্সি ফেয়ার' প্রকল্পকে অকার্যকরও করে রেল। এতে দেখা যায় এই সব ট্রেনে ৩০ শতাংশ আসন বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা আয় হয়েছে।