‘অ-নাগরিক!’, হাসপাতালে হাতকড়া পরিয়ে বেঁধে রাখা হল দু’জনকে


বন্দি: রতন বিশ্বাস ও কৃষ্ণ সরকার (ডান দিকে)। হাতকড়া খোলার আগে।

নাগরিকের অধিকার ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন। তোয়াক্কা করা হল না মানবাধিকারেরও। 
ডিটেনশন শিবির থেকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, 'বন্দি' দুই বাঙালিকে হাতকড়া পরিয়ে বেঁধে রাখার ছবি সামনে এসেছে অসমে। সোমবার দিনভর এই নিয়ে ছিছিক্কার এবং প্রতিবাদের মুখে অবশ্য দু'জনেরই হাতকড়া খুলে নেওয়া হয়েছে বলে খবর।

গুয়াহাটির বাসিন্দা প্রৌঢ় কৃষ্ণ সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ২৯ অক্টোবর। কেন? কৃষ্ণর দাবি, এনআরসি-তে নাম উঠলেও তাঁকে ডি-ভোটার বলে দাগিয়েছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। আদালতে তোলার পরে কৃষ্ণকে গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে পাঠানো হয়। পথেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তিনি। মির্জার হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে গোয়ালপাড়া শিবিরে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। গোয়ালপাড়া সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হৃদরোগী কৃষ্ণকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। সেই ছবি সামনে এসেছে।

আবার, বঙাইগাঁওয়ের বাসিন্দা রতনচন্দ্র বিশ্বাসের নাম ডি-ভোটারের তালিকায় উঠেছিল দু'বছর আগে। পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। সম্প্রতি তাঁর গ্যাস্ট্রিক আলসারের অস্ত্রোপচার হয় গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে। 'বন্দি' রতনকে হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালের জানলার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেই ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে।

 এ দিন দু'জনেরই হাতকড়া খোলা হয়েছে বটে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কেন পুলিশ তাঁদের হাতক়ড়া পরিয়েছিল, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। পলায়ন-প্রবণ বিপজ্জনক আসামির ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতিক্রমে হাতকড়া পরানোর বিধান আছে। এ ছাড়া হাতকড়া না-পরানোর কথাই বলে আদালত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশও তা-ই। সেখানে কৃষ্ণ আর রতনের মতো অসুস্থ মানুষকে কেন হাতকড়া পরানো হল? সরকারি হাসপাতালই বা তা হতে দিল কেন?

গুয়াহাটি হাসপাতালের সুপার রমেনচন্দ্র তালুকদার বলেন, ''এই নির্দিষ্ট ঘটনাটি জানতাম না। হাতকড়া পরানো বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু এ রাজ্যে হাসপাতাল থেকে বন্দি পালানোর ঘটনা এত বার ঘটেছে যে পুলিশ একটু বেশি সতর্ক থাকে। আমরাও তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করি না।''

পুলিশের বক্তব্য, এক জন কনস্টেবলের পক্ষে দিনরাত বন্দি রোগীর পাশে বসে থাকা সম্ভব নয়। তাই আলগা করে হাতকড়া পরানো হয়েছিল।

রতনবাবুর নাম ডি-ভোটার তালিকায় উঠল কেন? রতনবাবুর দাবি, তাঁর ঠাকুরদার নাম ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। কিন্তু বাবা বিরাজচন্দ্র বিশ্বাস পদবি বদলিয়ে বিরাজচন্দ্র শীল হয়েছিলেন। কিন্তু তার কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না, রতনের পদবিও বদলানো হয়নি। গোল বেধেছে তার থেকেই। তবে বিরাজচন্দ্র বিশ্বাসের নামে গেরুকাবাড়িতে জমি কেনার দলিল ছিল। রতনবাবু মনে করেছিলেন, ওটাই ভারতীয়ত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।

রতনের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নোটিস পেয়ে দিশাহারা রতনবাবু এক দালালকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। সে কথা দিয়েছিল, থানাকে 'ম্যানেজ' করে দেবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। মাস কয়েক পরে পুলিশ রতনকে গ্রেফতার করে গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে ঢুকিয়ে দেয়। আদালতে রতনবাবুর আইনজীবী প্রমাণ করতে পারেননি যে, বিরাজচন্দ্র শীল ও বিরাজচন্দ্র বিশ্বাস একই ব্যক্তি।

হাতকড়া কাণ্ডের পর রতনবাবুর মামলাটি হাইকোর্টে লড়বেন বলে এগিয়ে এসেছেন আইনজীবী আমন ওয়াদুদ। কৃষ্ণবাবুর মামলাটি দেখবেন হুসেন আহমেদ মাদানি।