সার্ফ দিয়ে কলকাতায় তৈরি হচ্ছে দুধ! আর কী ভাবে তৈরি হয় জাল দুধ, জানুন


'দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে' বা 'দুধ-দুধ-দুধ-দুধ পিও রোজ গ্লাসফুল'- দুধ নিয়ে কত যে গান আর জিংঙ্গেল তৈরি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু দুধের নাম শুনলে মনে হয় না কেউ বলবে 'গিভ মি মোর'। কারণ, আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় এবং জীবেনর অবিচ্ছেদ অঙ্গ হয়ে যাওয়া দুধ তার বিশুদ্ধতাই হারিয়ে ফেলেছে। একটা সময় দুধে জল মিশিয়ে জাল-কারবার শুরু হয়েছিল। এখন দুধের সেই জাল-কারবার-এ আরও এত ধরনের জল মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে সে সব কাহিনি জানলে সাধারণ মানুষ দুধ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে দিতে পারেন।

সবচেয়ে বড় কথা গরুর বা মহিষের দুধ দিয়েই এই জাল কারবার চলছে তা নয়। কালোবাজারির দল বিভিন্ন ধরনের জিনিস মিশিয়েও তৈরি করে ফেলছে দুধ। যা দেখতে এবং খেতে একদম আসল দুধের মতো। উত্তরপ্রদেশএর বুন্দেল শহরে এমনই এক দুধের কালোবাজারির খবর বছর খানেক আগে ফাঁস করেছিল সর্বভারতীয় এক টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল। তারা দেখিয়েছিল কী ভাবে তৈরি করা জাল দুধ। এমন এমন জিনিস দিয়ে সেই দুধ তৈরি হচ্ছে যার উপকরণের কথা জানতে পারলে চোখ কপালে তুলবেন। আর এই জাল দুধ বুন্দেলশহর থেকে চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বলেও জানানো হয়েছিল এই প্রতিবেদনে।

সবচেয়ে বড় কথা সর্বভারতীয় সেই টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টারের সামনেই জাল দুধ তৈরি করে দেখিয়েছিল কালোবাজারির দল। দেখিয়েছিল মাত্র ১০ মিনিটে আধ কিলো নিম্নমানের গুড়ো দুধে ১০ কিলো দুধ তৈরির ফর্মূলা। এই কালোবাজারির দল একটি পাত্রে খানিকটা মাথায় মাখার শ্যাম্পু ঢেলে দেয়। এরপর তারমধ্যে রিফাইন্ড ওয়েল মিক্সড করে। এরপর এই মিশ্রণ কিছুক্ষণ ঘাটার পরই তা সাদা রঙের একটি মিশ্রণে পরিণত হয়। এরপর তারমধ্যে আধ কিলো নিম্নমানের গুড়ো দুধ মিশিয়ে ফের ভালো করে মিশ্রণটিকে ঘাটতে হয়। স্বাদের জন্য মেশানো হয় সামান্য চিনি। এরপর এক বালতি জল। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল দুধ। এবার এই দুধ ক্য়ান ভর্তি হয়ে বা প্যাকেটে করে পৌঁছে যাচ্ছে বাজারে। দিনে এমন ১০ কুইন্টাল দুধ নাকি তৈরি করে কালোবাজারিরা। আর তা পৌঁছে যায় বাজারে। অনেকে এই দুধের প্যাকেট ভিন রাজ্যেও পাঠান বলে কালোবাজারিরা দাবি করেছে। এই দুধের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট এটা পচে না। ফ্রিজে না রেখেই এই নকল দুধ দিব্যি ৪ থেকে ৫ দিন থেকে যায়। কালোবাজারিদের দাবি, এই দুধ সবচেয়ে বড় ক্রেতা মিষ্টির দোকান। কারণ, এই নকল দুধে অনেকখানি ছানা কাটে। সেইসঙ্গে দামও অত্যন্ত কম পড়ে। যেখানে গড়-পড়তায় এক লিটার গরুর দুধের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা সেখানে এই নকল দুধের দাম কিলো প্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা।

কালোবাজারি এমন দাবিও করে যে এই দুধের দই অসাধারণ হয়। ঘি-ও ব্যাপক বের হয়। কিন্তু, এই নকল দুধে তৈরি ঘি বা দই কি সত্যি স্বাস্থ্যসম্মত?

 কালোবাজারিদের পরিস্কার দাবি এই মাগ্গি-গণ্ডার বাজারে টিকে থাকাই দায়। অধিকাংশ মানুষের কাছে কাজ নেই। সামান্য কিছু অর্থে যদি জীবিকা নির্বাহের মতো অর্থ উপার্জন করা যায় তাতে ক্ষতি কি। কালোবাজারির কথা সত্যি বলে ধরে নিলে অনেক প্রশ্নই উঠতে বাধ্য। দুগ্ধজাত পণ্য সহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী-তে ভেজাল নির্মূলকরণের পরিকাঠামো কি আদৌ গড়ে তুলতে পেরেছে সরকার? শুধু বাংলা বা উত্তর প্রদেশ নয় দেশজুড়েই রমরমিয়ে চলছে এই ভেজাল কারখানা। যার করালগ্রাসে পড়েছে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীও।