এলাকার হাঁড়ির খবর জানাতে নয়া অ্যাপ গুগলের


'সবজান্তা' গুগল এ বার খুঁজে দেবে ভার্চুয়াল জগতের প্রতিবেশীদের!

নিজের পাড়া, অফিস চত্বর বা সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা এলাকা— দরকারি যে কোনও প্রশ্নের উত্তর পেতে 'নেবারলি' নামের নতুন একটি অ্যাপ আনছে গুগল। মুম্বই, আমদাবাদ, জয়পুরের মতো শহরের পরে এ বার কলকাতাতেও চালু হচ্ছে এই অ্যাপ। ধাপে ধাপে কয়েক মাসের মধ্যে সারা দেশেই এটি চালু করতে চায় গুগল।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের এত মাধ্যম থাকতে আবার নতুন করে 'নেবারলি' কেন?

গুগল-কর্তা বেন ফহনারের দাবি, এই অ্যাপ স্থানীয় ভিত্তিতে জরুরি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করবে। কেজো তথ্য আদান-প্রদানই এর একমাত্র উদ্দেশ্য। এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার মতো ব্যক্তিগত প্রচার, কুৎসা বা গুজব ছড়ানোর জায়গা নেই বলেই দাবি নির্মাতাদের। নেই অহরহ আপডেট আর ঘনঘন নোটিফিকেশনের বালাই। ইনবক্সে যখন-তখন উটকো উঁকিঝুঁকির ঝামেলাও নেই। কারণ, ব্যক্তিগত বার্তা পাঠানোর সুযোগ নেই ওই অ্যাপে।

তা হলে কী আছে? ধরা যাক, ওই অ্যাপ ব্যবহারকারী শ্যামবাজারে রয়েছেন। ওই এলাকা সম্পর্কে নির্দিষ্ট একটি তথ্য জানতে চান তিনি। অ্যাপে সেই প্রশ্নটি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যাবে ওই এলাকায় থাকা একই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে যে ওই প্রশ্নের উত্তর জানেন, তিনি সেটা লিখে দিতে পারবেন। ওই ভার্চুয়াল পড়শির নাম জানা গেলেও পদবী থাকবে না সেখানে।

গুগল-কর্তা জানান, নতুন এই অ্যাপে প্রয়োজন অনুযায়ী তিনটি জায়গাকে (লোকেশন) যুক্ত করা যাবে। প্লে-স্টোর থেকে এক বার ওই অ্যাপ ফোনে ডাউনলোড করে লগ-ইন করলেই তা ব্যবহারকারীর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাবে। তার পরে কাজ করতে শুরু করবে।

এ ভাবেই কোনও এলাকায় ওই অ্যাপের মাধ্যমে কারা কী জানতে চাইছেন, সবই ভেসে উঠবে ফোনের পর্দায়। তার মধ্যে নিজের আগ্রহ ও প্রয়োজন অনুযায়ী ১৫টি পর্যন্ত বিষয় বেছে নিতে পারেন অ্যাপ ব্যবহারকারী।

সেই মতো শিক্ষা, বিনোদন, বাজার, চিকিৎসাকেন্দ্র, রেস্তরাঁ— সব কিছুরই হদিস মিলবে। তবে অ্যাপে সব কিছুই 'পোস্ট' করতে হবে প্রশ্ন হিসেবে। উত্তরও দেবেন আগ্রহী পড়শিরা। যাঁরা ঠিক পরামর্শ দেবেন, তাঁদের রেটিংও করবে অ্যাপ। উপকারী প়ড়শি হিসেবে তাঁদের তুলে ধরা হবে।

গুগল-কর্তা বেন বলেন, "ভারতের সংস্কৃতি এবং ভাষাগত বৈচিত্র অনুযায়ী প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই ওই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।" নতুন এই অ্যাপ কাজ করবে শুধু ভারতেই। ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, বাংলা, মরাঠি, গুজরাতি, তামিল-সহ মোট আটটি ভাষায় ওই তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। তবে নতুন অ্যাপে বিজ্ঞাপন থাকবে না বলেই দাবি গুগল-কর্তার। 

কিন্তু সোশ্যাল সাইটে বুঁদ হয়ে থাকার যুগে ওই অ্যাপ কতটা কার্যকর হবে? গুগল-কর্তার দাবি, 'অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগের ভার' থেকে মুক্তি দিতেই এই নয়া অ্যাপ। এ দেশে কাজের প্রয়োজনে অনেকেই বিভিন্ন শহরে যাতায়াত করেন। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের যোগাযোগ গড়ে তুলতেই নতুন অ্যাপ।

আরশিনগরের পড়শিকে জানা হয়নি বলে আক্ষেপ ছিল লালনের। এই অ্যাপ আরশিনগরের দূরত্ব ঘোচাবে, না আরও বাড়াবে, তা সময়ই বলবে।