মধ্যমগ্রামে পরকীয়ার জেরে নৃশংস খুন যুবক, অন্যত্র মিলল কাটা মাথা ও পা


বারাসত: গলা থেকে মুণ্ড আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। হাঁটুর তলা থেকে দু'টি পা'ও কেটে ফেলা হয়। এমনকী, কেটে দেওয়া হয় দুই হাতের শিরাও। মধ্যমগ্রামে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্ত্রীর 'প্রেমিক'কে এমনই নৃশংসভাবে খুন করল স্বামী। এই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী এবং মৃতের 'প্রেমিকা'কেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। বুধবার সকালে দু'পা কাটা অবস্থায় প্রেমিকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। ধৃতদের জেরা করে অনেক পরে পৃথক জায়গা থেকে মৃতের মুণ্ড এবং দু'টি পা উদ্ধার করে পুলিস। প্রমাণ লোপাট করার জন্য এবং মৃতকে যাতে কেউ চিনতে না পারে, তার জন্য দেহকে টুকরো করে কেটে পৃথক জায়গা ফেলা হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিস।
পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম আব্দুল হাসান (২৬)। ধৃতদের নাম জাকির হোসেন এবং আর্জিনা বিবি। মধ্যমগ্রামের রোহান্ডার দক্ষিণ জোজরা এলাকায় তাদের বাড়ি। আব্দুলের সঙ্গে আর্জিনার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে জাকির এই পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পারে। সে প্রেমিককে হাতেনাতে ধরার জন্য ওত পেতে ছিল। জাকির কসাইয়ের কাজ করে। ধৃতরা জেরায় পুলিসকে জানিয়েছে, জাকির যখন বাড়িতে থাকত না, আব্দুল তার ঘরে গিয়ে আর্জিনার সঙ্গে দেখা করত। সোমবার রাতেও আব্দুল আর্জিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। দু'জনে যখন ঘরের ভিতরে ছিল, তখন আচমকা বাড়িতে ফিরে আসে জাকির। আব্দুলকে হাতের সামনে পেয়ে প্রথমেই সে সজোরে মাথায় আঘাত করে।

পুলিস জানিয়েছে, আঘাতে আব্দুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর আর্জিনার সামনেই তাঁর প্রেমিক আব্দুলকে কুপিয়ে কুপিয়ে এবং দু'হাতের শিরা কেটে নৃশংসভাবে খুন করে জাকির। আব্দুলের মৃতদেহ লোপাট করার জন্য জাকির দেহ টুকরো টুকরো করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে আর্জিনার সামনেই আব্দুলের মুণ্ড কেটে দেহ থেকে আলাদা করে। তারপর হাঁটুর নীচ থেকে দু'টি পা কেটে ফেলে। আব্দুলের দেহ লোপাট করার কাজে জাকিরের সঙ্গে আর্জিনাও যুক্ত ছিল। সোমবার রাতেই জাকির একটি খালের ধারে কাটা পা এবং মুণ্ডহীন আব্দুলের দেহ ফেলে আসে। তারপর বাড়িতে ফিরে আবার দু'টি কাটা পা এবং কাটা মুণ্ড নিয়ে অন্য জায়গায় যায়। গোরু কাটার পর সে যে জায়গায় গোরুর মাথা ও শিং ফেলে, সেখানে আব্দুলের মুণ্ড ও কাটা পা ফেলেছিল।

এদিকে, সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আব্দুল বাড়ি না ফেরায় তাঁর পরিবারের লোকজন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন। বাড়িতে তাঁর বাবা-মা এবং এক বোন রয়েছে। পরিবারের তরফে মঙ্গলবার মধ্যমগ্রাম থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরিও করা হয়। বুধবার সকালে জাকিরের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে স্থানীয়রা একটি খালের ধারে মুণ্ডহীন দেহ দেখতে পান। পুলিস দেহ উদ্ধার করার পরই জাকির ও আর্জিনাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের জেরা করে মুণ্ড ও কাটা পা দু'টি উদ্ধার করা হয়।

বারাসত পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই এই খুন। অভিযুক্ত জাকির এবং তার স্ত্রী আর্জিনাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।