সরকারি প্যাকেজ ছেড়ে আন্দোলনে নামুন, মাওবাদী নেতা আকাশের খোলা চিঠি জঙ্গলমহলে


লালগড় আন্দোলনের কোনও কোনও জায়গায় বন্দুক রাজনীতির নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘ দিন পর নীরবতা ভেঙে জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে লালগড় আন্দোলনের ভুল স্বীকার করে খোলা চিঠিতে বার্তা দিলেন মাওবাদী নেতা আকাশ।

কিষেণজির মৃত্যুর পর এই প্রথম সরাসরি জঙ্গলমহলের মানুষের উদ্দেশে কোনও বার্তা পাঠালেন সিপিআই (মাওবাদী) নেতৃত্ব। এই চিঠি ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গ্রামে মানুষের হাতে পৌঁছেছে।

জঙ্গলমহলের লড়াকু জনগণ এবং পার্টি কর্মীদের প্রতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র আবেদন শীর্ষক এই তিন পাতার চিঠিতে শুরুতেই আত্মসমালোচনা করেছেন আকাশ। বর্তমানে তিনি মাওবাদীদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক। তিনি আত্মসমালোচনা করে বলেছেন, দীর্ঘ সাত বছর জঙ্গলমহলের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার জন্য।

ওই চিঠিতে আকাশ বলেছেন, "লালগড় আন্দোলনের পরিচালনায় আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি থেকেছে। যার ফলস্বরূপ শত্রুপক্ষের এমন কিছু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা না নিয়েও প্রতিরোধ করা যেত।" আকাশ স্বীকার করেছেন যে ওই অনাবশ্যক হত্যা এড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় সমর্থকদের একাংশ সংগঠনের কাজে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। চিঠিতে ওই মাওবাদী নেতা স্বীকার করেছেন, "জনসাধারণের কমিটি এবং গণমিলিশিয়ার প্রসার যে ব্যাপক হারে হয়েছিল, সেই দ্রুততার সঙ্গে পার্টি কমিটি ও স্কোয়াড গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছি।"

চিঠিতে তৃণমূল এবং বিজেপিকে একই সঙ্গে আক্রমণ করে বলা হয়েছে, "মমতা ব্যানার্জি দু'টাকার চাল এবং সাইকেলের লোভ দেখিয়ে মানুষকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে চাইছে। অন্য দিকে বিজেপির লক্ষ্য, আদিবাসী সমাজের হিন্দুত্বকরণ।"

ওই চিঠিতে ন'দফা দাবি পেশ করেছেন আকাশ। সেই দাবিগুলির মধ্যে বিশেষ ভাবে উঠে এসেছে জঙ্গলমহলে মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার এবং আঞ্চলিক জনগোষ্ঠীগুলির ভাষায় প্রশাসনিক কাজকর্ম চালু করার দাবি। জঙ্গলমহলের সাঁওতাল এবং কুর্মি সমাজের ভাষা সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার দাবিও তুলেছেন তিনি। সঙ্গে বলা হয়েছে, দু'টাকা কিলো চালের ভিক্ষা নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ সমস্ত মৌলিক পরিষেবার উন্নতি এবং জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের দাবি।

সম্প্রতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঠিক আগে মূল স্রোতের সমস্ত রাজনৈতিক শিবির থেকে সরে এসে আদিবাসীদের একাংশ আদিবাসী উন্নয়ন মঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন। সেই মঞ্চের সদস্যরা একাধিক পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল এবং বিজেপিকে হারিয়ে। সেই আদিবাসী মঞ্চও ঠিক একই দাবি তুলে আন্দোলনে নেমেছে। আর সেখান থেকে এই মিলটা অদূর ভবিষ্যতে জঙ্গলমহলে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।