বরফ চাপা আপেল, মাথা চাপড়াচ্ছেন কাশ্মীরের চাষিরা


সময়ের আগেই তুষারপাত কাশ্মীরে। তাতে মোহময়ী রূপ ভূস্বর্গের। জোয়ার এসেছে পর্যটন শিল্পেও। কিন্তু মাথা কুটছেন স্থানীয় মানুষ। বিশেষ করে আপেল চাষিরা। গাছ থেকে ফল পাড়ার সময়টুকু পাননি তাঁরা। হাতে গোনা কয়েকজন ফল যদিও বা পেড়ে ফেলেছিলেন, বাগানের মধ্যেই জড়ো করে রেখেছিলেন। আচমকা তুষারপাতে যা বরফের নীচে চাপা পড়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকায়।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বরফ খুঁড়ে আপেল বের করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে এক যুবক। দু'হাত দিয়ে আপেলের স্তূপের উপর থেকে বরফের স্তর ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। কিন্তু জড়ো করা আপেলের খাঁজে খাঁজে ঢুকে গিয়েছে পেঁজা তুলোর মতো বরফ। একটা একটা করেও যদি বেছে বের করা হয়, তাহলেও সব আপেল উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

দিন কয়েক আগে পর্যন্তও একটি আস্ত আপেল বাগানের মালিক ছিলেন উপত্যকার বাসিন্দা আব্দুল গনি মীর। কিন্তু তুষারপাতের পর বাগানের গাছগুলি শুধু মাথায় বরফের ঝাঁকি নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। বরফের ভার নিতে না পেরে নুয়েও পড়েছে অনেক গাছ। প্রকৃতি যে এমন দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে তা কল্পনাও করে উঠতে পারেননি আপেল বাগানের মালিক। তিনি জানান, ''ঠিক কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনও পর্যন্ত তা বুঝে উঠতে পারছি না। তবে ১০ লাখ টাকার কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে। এত পরিশ্রম করে ফলিয়েছিলাম। এখন সব বরফের নীচে পচছে।''

শনিবার আচমকা তুষারপাতে আপেলচাষিরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েইছেন। সেইসঙ্গে গোটা উপত্যকা ছেয়ে গিয়েছে অন্ধকারে। এদিক ওদিক গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ পরিষেবা একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। একাধিক জায়গায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবাও মিলছে না। শ্রীনগর বিমানবন্দরে সমস্ত বিমানের উড়ান আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। যান চলাচল বন্ধ শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়েতে।

আপেল চাষ এবং কেনাবেচার উপর নির্ভর করেই জীবন যাপন করেন কাশ্মীরের ২০ লক্ষ মানুষ। তাই ফল পচে যাওয়ায় তাঁরা যতটা না আঘাত পেয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন শিকড় বাকড় সুদ্ধ গাছগুলি উপড়ে যাওয়ায়। ১৬ বছরের লালন পালনে একটি আপেল গাছ ফল দেওয়ার উপযুক্ত হয়। কিন্তু ততদিন চলবে কেমন করে? ভেবে কূল কিনারা করতে পারছেন না তাঁরা।

কাশ্মীর বাণিজ্য দফতরের তরফে বলা হয়েছে, আপেল কেনাবেচা করে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয় উপত্যকার। এ বছর ২০ হাজার মেট্রিক টন আপেল উৎপাদনের কথা ছিল। কিন্তু অসময়ের তুষারপাতে তার একটা বড় অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছুটা অংশ আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই কিছুটা হলে রক্ষে হয়েছে। তবে তাতে সান্ত্বনা পাচ্ছেন না আপেলচাষিরা। একটি আপেল বাগানের মালিক মহম্মদ আশরফ জানিয়েছেন, ''আপেল বেচে আগে বছরে ৪-৬ লক্ষ টাকা রোজগার করতাম। কিন্তু এখন তো কোনও ভরসাই পাচ্ছি না। এত গাছ নষ্ট হয়ে গেল। সবকিছু সামলে উঠতে কে সাহায্য করবে আমাকে? সংসার চলবে কীভাবে জানি না।''

এই পরিস্থিতিতে আপেলচাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু আর্থিক সাহায্যে দেওয়া যায়।