রাশ স্কুলব্যাগের ওজনে, প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে নয় ‘হোম-ওয়ার্ক’ও

স্কুলব্যাগের ভারে বেঁকে যাচ্ছে পিঠ, পড়ার চাপে পিষে যাচ্ছে মন।

একই সঙ্গে এই দুই বিভীষিকা থেকে খুদে পড়ুয়াদের বাঁচাতে এগিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকার। জানিয়ে দিল, প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও 'হোম-ওয়ার্ক' বা বাড়ির পাঠ নয়। সেই সঙ্গে প্রথম থেকে দশম— কোন শ্রেণির পড়ুয়ার স্কুলব্যাগের ওজন সর্বাধিক কত হবে, বেঁধে দিল তা-ও।

কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন কোনও মতেই দেড় কিলোগ্রামের বেশি হবে না। দশম শ্রেণিতে ব্যাগের ওজন হবে সর্বাধিক পাঁচ কিলোগ্রাম। সব স্কুলকে যথাযথ ভাবে এই নির্দেশ পালন করতে বলেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। রাজ্য সরকারের দাবি, ২০১৪ সাল থেকে সারা পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়মই চালু রয়েছে।

কাগজে-কলমে নিয়ম থাকলে কী হবে, খুদে পড়ুয়াদের বাড়ির পাঠ এবং ব্যাগের ভার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের স্কুলগুলিতে ব্যাগের ওজন মাত্রাছাড়া বলে অভিযোগ। দেখা গিয়েছে, কলকাতার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার স্কুলব্যাগের ওজন নয় কিলোগ্রাম!

সমস্যাটা সারা দেশেরই। তাই সম্প্রতি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুকে বলা হয়েছে, পঠনপাঠন ও স্কুলব্যাগের ওজন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে। ওই নির্দেশিকার মোদ্দা কথা: ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা এনসিইআরটি-র সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের কোনও রকম 'হোম-ওয়ার্ক' বা বাড়ি থেকে তৈরি করে আনার জন্য কোনও পাঠ দেওয়া যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই দুই শ্রেণিতে ভাষা ও গণিত এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভাষা, গণিত ও পরিবেশবিদ্যা ছাড়া অন্য কোনও বিষয় পড়াতে পারবে না স্কুল। এমনকি ছেলেমেয়েদের বাড়তি বই আনতেও বলা যাবে না।

শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, পাঠ এবং ব্যাগের ভার— বিষয় দু'টি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। পাঠের চাপ বেশি হলে বই আর খাতা বেশি হবে। ফলে ওজন বাড়বে স্কুলব্যাগের। তাই একসঙ্গে দু'টি বিষয়েই নিয়ন্ত্রণী নির্দেশিকা দরকার ছিল।
আইসিএসই পূর্বাঞ্চলীয় স্কুল সংগঠনের সভাপতি তথা রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ''পড়ুয়াদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যাগের বোঝা অন্তরায় হচ্ছিল। আশা করি, এ বার সমস্যা মিটবে। আমরাও বুঝতে পারলাম, কোন শ্রেণিতে ব্যাগের ওজন কী রকম হওয়া উচিত।'' ভারতীয় বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষা রেখা বৈশ্য বলেন, ''সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এটা বড্ড দেরিতে হল। আরও আগে করা উচিত ছিল।''
২০০৬ সালের কেন্দ্রীয় আইনে জানানো হয়েছিল, পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি করা যাবে না। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের দাবি, কয়েক মাস আগে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি স্কুলব্যাগের ওজন সংক্রান্ত একটি মামলায় বেশ কয়েক দফা নির্দেশ দেন। তার পরেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্র। এ রাজ্যে ২০১৪ সাল থেকেই স্কুলব্যাগ সংক্রান্ত নিয়মবিধি বলবৎ আছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ''কেন্দ্রীয় সরকার এ-সব বলার অনেক আগে থেকেই রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি মেনেই পাঠ্যপুস্তক ও ব্যাগের ওজন নির্ধারণ করেছে। এটা আমাদের ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়।'' সম্প্রতি সব স্কুলে লকার তৈরিতেও উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।