এই সেই আরপিএফ কর্মী, যার জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেন হাওড়া-দিঘার এক্সপ্রেসের গার্ড


শনিবার সকাল থেকে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে একটি ছোট্ট ভিডিও। যাতে দেখা যায় কী ভাবে এক গার্ড-কে ট্রেনের তলায় নিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে দিয়েছিলেন চালক। ট্রেন থামাতে দেরি হয়ে গেলে হয়তো সেই গার্ডের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে যেত। শরীরের রোম খাড়া করে দেওয়া সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়ে যায়।

এই ভিডিও-র নেপথ্যে এক জনের গলা পাওয়া গিয়েছে। যিনি সমানে চিৎকার করে যাচ্ছিলেন ট্রেন থামানোর জন্য। ট্রেনের কিছু যাত্রীকে ট্রেন থামানোর জন্য বলতে থাকেন। এমনকী সেই চিৎকার করে যাওয়া লোকটা যে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে রেল ট্র্যাকের উপর ছুটছিলেন তাও পরিষ্কার বোঝা গিয়েছে সেই ভিডিও-টিতে।

যিনি এভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে ট্রেনের তলায় থাকা সেই গার্ডের জীবন বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি হাওড়া ডিআরএম-এর আরপিএফ কর্মী এস দত্ত। শুক্রবার সকালে হাওড়া থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই চারমারি ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে পড়েছিল হাওড়া থেকে দিঘাগামী দুরন্ত এক্সপ্রেসটি। কারণ কোনওভাবে এয়ার-প্রেসারের পাইপটা খুলে গিয়েছিল। ফলে ট্রেনের চালক এয়ার-প্রেসার পাচ্ছিলেন না। পরে দেখা যায় এক জায়গায় এয়ার-প্রেসারের পাইপ খুলে গিয়েছে। গার্ড সেই পাইপ জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। চারমারি ব্রিজের কাছে টহলরত আরপিএফ-এর একটি দলও বিষয়টি-র উপরে নজর রেখেছিল। গার্ড-এর কাজ করার ভিডিও করছিলেন আরপিএফ-এর কনস্টেবল এস দত্ত। কারণ, এই ধরনের মেরামতিতে আরপিএফ দলকে ঘটনার ভিডিও করতেই হয়। এস দত্ত ও তাঁর সহকর্মী আরপিএফ জওয়ানরা দেখতে পান গার্ড এস এন রায় সমানে খুলে যাওয়ার এয়ার-পাইপটা লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আচমকাই এয়ার-পাইপ-এর দুটো মুখকে ঠিকঠাক করে লাগাতে সমর্থ হন গার্ড এস এন রায়। কিন্তু, তখনও ট্রেনের তলা থেকে বেরিয়ে আসেনি গার্ড। আরপিএফ কর্মীরা দেখতে পান আচমকাই একটা দুলকি চাল দিয়ে ট্রেনটি চলতে শুরু করে। আরপিএফ কর্মী এস দত্ত মুহূর্তের মধ্যে আঁচ করে ফেলতে পেরেছিলেন যে কতবড় ঘটনা ঘটতে চলেছে। মোবাইল-এ ভিডিও করা বন্ধ করে তিনি রেল ট্র্যাক ধরে ছুটতে শুরু করেন।

সমানে চিৎকার করে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। সমানে ওয়াকি-টকিতে মেসেজ পাঠাতে থাকেন। এমনকী ট্রেনের দরজায় দাঁড়়িয়ে থাকা যাত্রীদের চেন টানতে বলেন। এরপর আচমকাই ট্রেনটি দাঁড়়িয়ে যায়। হাফ ছেঁড়ে বাঁচেন আরপিএফ কর্মী এস দত্ত ও তাঁর সহকর্মীরা। ট্রেন থামতেই নিচ থেকে বেরিয়ে আসেন হাওড়া-দীঘা দুরন্ত এক্সপ্রেসের গার্ড। তাঁর চোখে-মুখে তখনও মৃত্যুর আতঙ্ক। তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন কতবড় দুর্ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছিলেন তিনি।

এই ঘটনায় সকলেই এখন আরপিএফ কর্মী এস দত্ত-র প্রত্যুৎপন্নমত্তি-তের তারিফ করছেন। যে দ্রুততার সঙ্গে তিনি বিপদ আঁচ করে চালকের নজর আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তার প্রশংসা করছেন আরপিএফ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা থেকে শুরু করে রেলের বড়-বড় কর্তাব্যক্তিরা। এস দত্ত উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিতে সামান্য দেরি হলে যে তাঁর বড় বিপদ ঘটে যেত তা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন গার্ড এস এন রায়ও। আরপিএফ জওয়ানরাও সকলেই এখন এস দত্তের এই সাহসীকতার প্রশংসা করছেন। যে ভাবে এই আরপিএফ কর্মী রেলেরই এক কর্মীর জীবন শুধু বাঁচালেন তা নয়, সেইসঙ্গে রেলকে এক বিতর্ক থেকে রক্ষা করেছেন তাকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন সকলে। যদিও, গোটা বিষয়ে আরপিএফ কর্মী এস দত্তের সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শুধু জানা গিয়েছে এক জনের জীবন রক্ষা করতে পেরে তিনি খুশি হয়েছেন।