রামমন্দিরের জন্য অর্ডিন্যান্সের আওয়াজ সাধুদের সম্মেলনে


দিল্লি: রাফাল থেকে সিবিআই–‌‌আরবিআই— নানা ইস্যুতেই কোণঠাসা সরকার। এ সময় রামমন্দির ইস্যুতে হাওয়া তাতানোর চেষ্টায় নেমে পড়েছে সঙ্ঘ পরিবার। সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মামলায় শুনানি পিছিয়ে দিতেই সঙ্ঘের শীর্ষ কর্তারা সরব। হিন্দু সমাজ নাকি আর অপেক্ষা করতে নারাজ। ১৯৯২–‌এর মতোই তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আওয়াজ উঠছে আদালতকে এ নিয়ে অর্ডিন্যান্স আনার পক্ষে। দিল্লির তালকটোরা স্টেডিয়ামে বসেছিল অখিল ভারতীয় সন্ত কমিটির মহাসম্মেলন। সাধুদের দু'‌দিনের এই সম্মেলন শেষে আজ দাবি উঠল, অর্ডিন্যান্স এনে মন্দির মির্মাণের রাস্তা পরিষ্কার করা হোক।

দেওয়ালির মুখে উত্তরপ্রদেশের গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও মন্দির। তঁার পরামর্শ, '‌আপনাদের সাধ পূর্ণ করতে রামের নামে এবার প্রদীপ জ্বালান। শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে এই ইচ্ছা।'‌ সরযূ নদীর তীরে রামমূর্তি গড়ার কথাও বলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নিয়ে এসেছে হ্যাশট্যাগ:‌ '‌জ্বালাও এক দিয়া রামমন্দির কে নাম কা'‌। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় গোয়েল বলেন, ভক্তদের বিশ্বাস তুলে ধরতেই এই প্রচার। সোজা কথায় কোমর বেঁধেই নেমে পড়েছে সঙ্ঘ পরিবার। যদিও বিরোধীরা বিজেপি–‌কে কটাক্ষ করে বলছে,‌ '‌প্রতি পঁাচ বছর অন্তর ভোটের আগে বিজেপি–‌র রামমন্দিরের কথা মনে পড়ে।'‌

লোকসভা নির্বাচনের আগেই অযোধ্যা জমি মামলার নিষ্পত্তির আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বলেছে, জানুয়ারি মাসে শুনানি হবে। এর পরই বিজেপি–‌র একাধিক নেতা বলতে শুরু করেছেন, আর দেরি নয়, সংসদে এবার আইন আনা হোক। ডিসেম্বরেই শুরু হোক রামমন্দির নির্মাণ। অর্ডিন্যান্সের দাবিতে সুর চড়াচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের বিভিন্ন শাখা সংগঠন। এদিকে মন্দির নির্মাণ নিয়ে চাপ বাড়িয়েছে শিবসেনাও। দলের নেতা উদ্ধব ঠাকরে চলতি মাসের ২৫ তারিখে অযোধ্যায় যাচ্ছেন।

সংসদে রামমন্দির বিল আনার ছক কষছে বিজেপি। দলের রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিনহা ইঙ্গিত দিয়েছেন, শীত অধিবেশনে এই ইস্যুতে বিল আনতে চলেছেন তিনি। টুইটে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, '‌কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, সপা নেতা অখিলেশ যাদব, আরজেডি–‌র লালুপ্রসাদ, বসপা নেত্রী মায়াবতী এবং সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিরা কি তঁার প্রাইভেট বিল সমর্থন করবেন? এবার ওঁদের উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।'‌ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, ২০১৯–‌এর ভোট–‌বৈতরণী পেরোতে রামমন্দির বিল এনে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। প্রথমত, দেখানো যাবে বিজেপি রামমন্দির তৈরির জন্য কতটা উদ্যোগী। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি বিল এনে দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া, তারা চায় মন্দির তৈরি হোক। বিজেপি বিলক্ষণ জানে, সংসদে প্রাইভেট বিল এলে সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল তোলা কঠিন হবে। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্কে বিরোধী দলগুলিকে মন্দির–‌বিরোধী বলে দেখানো যাবে।

রবিবার, তালকটোরা স্টেডিয়ামে সাধু–‌সমাবেশের শেষ দিনে হাজির হয়েছিলেন আর্ট অফ লিভিং–‌এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীশ্রীরবিশঙ্কর। তিনি বলেন, '‌দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ চাইছে মন্দির তৈরি হোক। শুধু সাধুসন্তদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্য মন্দির জরুরি। তবে আগে মামলাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সমাধানের রাস্তা খেঁাজা উচিত। অর্ডিন্যান্স ও আইনের রাস্তা হতে পারে পরের বিকল্প।'‌