বিস্তর বরফ, সরাতে অনেক সময় লাগবে ইমরান


অজস্র মৃত্যু, অগণিত ক্ষতস্থান আর অনর্গল রক্তপাতের যন্ত্রণা বাধ্য করে যে সিদ্ধান্ত নিতে, মাত্র একটা সদর্থক ভাষণই সে সিদ্ধান্তকে বদলে দেবে, এমনটা ভাবা দূরাশা। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে অনেকগুলো উষ্ণ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ভারতের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যানের বার্তা পেতে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিশ্চয়ই ভাল লাগেনি। কিন্তু সন্ত্রাসে মদত বন্ধ না হলে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই ভারত বসবে না, এটা যে নয়াদিল্লির ঘোষিত অবস্থা, তা ইসলামাবাদের জানা। অতএব, করতারপুর করিডরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান থেকে খুব বেশি প্রাপ্তির আশা না করাই ভাল পাকিস্তানের।

করতারপুর করিডরকে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত, দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সে প্রকল্পের শিলান্যাস, শিলান্যাসের মঞ্চ থেকে পাক প্রধানমন্ত্রীর জোর সওয়াল ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে, পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর ভাষণে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সৌহার্দের সুর-সবই অত্যন্ত ইতিবাচক। কাশ্মীর সমস্যায় আটকে না থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়া উচিত প্রতিবেশী দেশ দুটোর-সওয়াল ইমরান খানের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরস্পরের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধ করেছিল যে দেশগুলো, তারা যদি তিক্ততা ভুলে পরস্পরের মিত্রে পরিণত হতে পারে, তা হলে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির আশা নেই কেন? ইমরান অনেকটা এমনই প্রশ্ন তুলেছেন। ইমরানের প্রশ্নগুলো যথার্থ। ইমরানের প্রস্তাবনাও প্রশংসনীয়। কিন্তু ইমরান খুব ভাল ভাবেই জানেন, এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত খুব ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই নিজের সদর্থক প্রস্তাবনার জবাবে ভারতের কাছ থেকে কোনও ভাল উত্তর পেতে হলে সর্বাগ্রে কিছু সদর্থক পদক্ষেপও ইমরান খানকে করতে হবে।

ভারত-পাক মৈত্রীর কথা ইমরান খান এ প্রথম বার বলছেন, এমনটা নয়। এর আগেও একাধিক অবকাশে ইমরান খান ভারত-পাক মৈত্রীর কথা বলেছেন। আবার বলি, ইমরান খানের এই বার্তা সদর্থকই। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও ঠিক যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ এখনও করেননি। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ইমরানের আমলে কমেছে, এমনটা ইমরান নিজেও দাবি করবেন না। মোদী সরকারের কঠোর অবস্থানের জেরে জম্মু-কাশ্মীরে যে অশান্তি এখন নিত্যদিনের, সেই অশান্তির আগুনে হাওয়া দেওয়াও পাকিস্তান বন্ধ করেনি। এত কিছুর মাঝেও করতারপুর করিডর দু'দেশের ঐকমত্যের ভিত্তিতে উন্মুক্ত হতে চলেছে, এ অবশ্যই একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দু'দেশের সাধারণ জনতাও এই করিডরের শিলান্যাসে খুশি। কিন্তু এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, শুধুমাত্র এই করিডরের শিলান্যাস যাবতীয় বরফ গলিয়ে দেবে।

ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যে পরিমাণ বরফ জমেছে, এক দিনে বা কোনও একটা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সেই বরফ গলে যাওয়া সম্ভব নয়। পারস্পরিক বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে একটা দীর্ঘ পথ চলতে হবে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে। আলোচনা শুরুর প্রক্রিয়ার সাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা থাকলে পাকিস্তানের মাটিতে লালিত হতে থাকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ করতেই হবে ইমরানকে। তা না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার প্রস্তাব দিলে ফের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।