কেমন আছে ৭০০ বছরের পুরনো রাজধানী


ভারত বৈচিত্র্যময় দেশ৷ এই বাক্যটার সঙ্গে সকলের পরিচয় হয় ভূগোল বইয়ের পাতায়৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের মাটিতে মিশে রয়েছে হাজার হাজার ইতিহাস৷ যা অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না৷ কখনও জানতে ইচ্ছা হয় কেমন ছিল এই ভারত? ফুরসত মিললেই যেখানে ঘুরতে যাই সেখানের ইতিহাসটাই বা কি? ভারতে প্রধানত মন্দিরের সংখ্যা বেশি৷ আর তাছাড়া বাকি সবটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের সামনে একবার গিয়ে দাঁড়ালেই টের পাওয়া যায় ৭০০ বছর আগে কেমন ছিল এই দেশ৷

কর্ণাটকের হাম্পি এখন নিতান্তই একটি ছোট শহর৷ কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে এই হাম্পি ছিল মধ্যযুগের হিন্দু রাজ্য বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী৷ কি শুনেই আরও জানতে ইচ্ছা করছে তো? তুঙ্গভদ্রার তীরে হাম্পি দর্শন করতে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়বে একাধিক মন্দির৷ আর তারও কিছুটা দূরে দক্ষিণ দিকে একাধিক রাজকীয় প্রাসাদ৷ যার ভিড়ে আপনার মনে হবে দেশে থেকেও এই শহরটা দেখতে এত দেরি করে ফেললাম৷ শহরে ঢুকতেই প্রথমে বিরূপাক্ষ মন্দির বা পম্পাপতির মন্দির পড়ে৷ কথিত রয়েছে, হাম্পির সবচেয়ে পুরনো মন্দির নাকি এটাই৷

এই মন্দিরটির বিশেষত্ব হল, মন্দিরের প্রবেশ পথে দু'টি গোপুরম এবং দু'টি বৃহত্‍ প্রাঙ্গণ৷ মন্দিরের গর্ভগৃহটি গোপুরমের একেবারে সোজাসুজি৷ দ্বিতীয় গোপুরমটি রায় গোপুরম হিসেবে পরিচিত৷ এটি পেরোলেই যে প্রাঙ্গণটিতে ঢুকবেন সেখান থেকে কিছু দূর এগোলেই বাঁদিকে পড়বে পাতালেশ্বরের মন্দির, মুক্তি নরসিংহ এবং সূর্যনারায়ণের মন্দির৷ আর ডান দিকে পড়বে লক্ষ্মীনরসিংহ ও মহিষাসুর মর্দিনীর মন্দির৷

আস্তে আস্তে মন্দিরে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন পাথরের তৈরি বিরূপাক্ষ অর্থাৎ শিবলিঙ্গ বিরাজ করছেন মন্দিরজুড়ে৷ এঁনারই নাম পম্পাপতি৷ সেজন্য জায়গার নাম পম্পাক্ষেত্র বা হাম্পি৷ এবার এর উত্তর দিকে এগোলে পাবেন দু'টি মন্দির৷ একটি হল পম্পাদেবী আর অন্যটি ভুবনেশ্বরী মন্দির৷ মন্দির ঘোরা শেষ, মন্দিরের ইতিহাস জানাও প্রায় শেষ৷ এবার মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেই দেখতে পাবেন পশ্চিমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাতুঙ্গা পাহাড়৷ সেখানেও রয়েছে আরও একটি মন্দির৷ নাম বীরভুবনেশ্বরের মন্দির৷ এখানে উঠলেই বিধ্বস্ত হাম্পির পুরো দৃশ্য ধরা পড়বে আপনার চোখে৷

ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাবেন, এই মন্দির চত্বরে এক সময় নানা রকমের দামী দামী পাথর ও মুক্তোর বাজার ছিল৷ এখান থেকে আরও কিছুটা পূর্বদিকে হাঁটলেই কিংস ব্যাল্যান্স পড়বে৷ সেখানে রাজা নিজের ওজনের সমান মণি-মুক্তো-রূপো পাল্লায় মেপে ব্রাহ্মণ ও গরীবদের যৌতুক দিতেন৷ কিংস ব্যাল্যান্সকে পিছনে রেখে আর একটু গেলেই পড়বে হাম্পির সব চাইতে অমূল্য সম্পদ বিধালা মন্দির৷ শহরে ঢুকতে না ঢুকতেই অনেক মন্দিরের ইতিহাস জানা হল৷ তবে আসল মন্দির দর্শন করতে যেতে গেলে নিতে হবে একটি গাড়ি৷

যখন পথ দিয়ে গাড়িতে করে আসল মন্দিরের দিকে যাবেন, তখন শুধু চোখে পড়বে সারি সারি নানা রকম কীর্তির ধ্বংসস্তূপ৷ এই মন্দিরের ঠিক সামনেই আছে পৃথিবী বিখ্যাত গ্রানাইট পাথরের রথ৷ এমনকি ইতিহাস বলছে, কোণারকের রথ এই রথ খোদাই করতে অনুপ্রাণিত করেছিল৷ যাক আবার ফিরে আসা যাক বিরূপাক্ষ মন্দিরে৷ এবার দক্ষিণ দিকে হাঁটলে পড়বে হেমকুন্টা নামে একটি জায়গা৷ যেখানে অনেকগুলি ছোট ছোট মন্দির আছে৷ হেমকুন্টা থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে দক্ষিণ দিকে ঘুরলেই দেখতে পাওয়া যাবে বিশালাকার গণেশ মূর্তি৷ একশিলার তৈরি প্রায় ১২ ফুট উচ্চতার এই মূর্তিটি সত্যিই আশ্চর্যের৷

এখান থেকে প্রায় এক কিমি দূরত্বে কমলাপুরে রয়েছে বড় শিবলিঙ্গ৷ গোটা হাম্পি শহরে এটিই সব চাইতে উচ্চতায় বড়৷ আর এই শিবলিঙ্গটি জলের মধ্যে স্থাপিত৷ কারণ একটি জল প্রবাহ মন্দিরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে৷ বড় শিবলিঙ্গের কাছেই আছে নৃশিংহদেবতার মূর্তি৷ তবে বিদেশি হানায় এই মূর্তিটি এখন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত৷ এবার দক্ষিণ দিকে এগোলে চোখে পড়বে বিশাল বিধ্বস্ত রাজপ্রাসাদের অস্তিত্ব৷ এখানকার লোটাস মহল, কুইনস বাথ এককথায় অনবদ্য৷ কুইনস বাত বা মহারাণীর স্নানাগারটির স্থাপত্যশিল্প হিন্দু-মুসলিম শৈলীর মিশ্রণে৷