যোগীর ছোঁয়াচ এ রাজ্যের স্কুলে, ইসলামপুর নাম বদলে হল ‘ঈশ্বরপুর’!

নামবদলের সেই বোর্ড।

ইলাহাবাদ হয়েছে 'প্রয়াগরাজ'। ফৈজাবাদ 'অযোধ্যা নগর'।



যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে যখন একের পর এক জায়গার নাম বদল হচ্ছে, তখন তার আঁচ পড়ল পশ্চিমবঙ্গেও। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) পরিচালিত 'সরস্বতী শিশুমন্দির ও বিদ্যামন্দির' স্কুলের বোর্ডে জায়গার নাম বদলে লেখা হয়েছে 'ঈশ্বরপুর'।

যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত কোনও স্কুল কি এ ভাবে জায়গার নাম বদলাতে পারে? কারণ, স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের বোর্ডে দাবি করেছেন, স্কুলগুলি 'মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত'। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অনুমোদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।

ভিএইচপি-র পূর্ব ভারতের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহের বক্তব্য, ''ইসলাম শব্দটা ঔপনিবেশিক। মুসলিম শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া। ঐতিহাসিক ভাবে ওই জায়গার নাম ঈশ্বরপুর।'' তাঁদের কার্যালয়ের বোর্ডেও 'ঈশ্বরপুর' লেখা।

ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, ভিএইচপি-র দাবির সারবত্তা নেই। গৌতম ভদ্রের মন্তব্য, ''এটা হাস্যকর! বস্তুত, ইসলামপুর নামের মধ্যে একটি চমৎকার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আছে। 'ইসলাম' যেমন আরবি শব্দ, তেমনই 'পুর' একটি বৈদিক শব্দ। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি।'' ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের বক্তব্য, ''যে যুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা করা হয়, ইসলামপুরের নাম বদলের ক্ষেত্রে তা কাজ করে না। এটা এক ধরনের গেরুয়া সন্ত্রাস।'' 

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ''ভিএইচপি পরিচালিত স্কুল আদৌ পর্ষদ অনুমোদিত কি না, তা খবর নিয়ে দেখব। এ ধরনের অনুমতি আমরা দিই না। যদি হয়, তা হলে ব্যবস্থা নেব। এটা বিভেদের রাজনীতি।'' শিক্ষামন্ত্রী 'খবর' নেওয়ার কথা বললেও স্কুলের বোর্ডে 'রেজিস্ট্রেশন নম্বর' হিসেবে—৬৮৮-এস ই (ই ই)/আর টি ই-৯৪/২০১৬/পি ২ লেখা আছে। যদিও তার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি। এ বিষয়ে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করতে চাননি।

ইসলামপুরের আদি নাম 'ঈশ্বরপুর' ছিল, এমন তথ্য জানা নেই বলে স্থানীয় বিশিষ্ট মানুষদের দাবি। তাঁদের প্রশ্ন, 'মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত' কোনও স্কুল এ কাজ করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে না কেন?