সঙ্কটের মুখে বাংলার হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্প


কলকাতা: বর্তমানে অতিপরিচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের অন্যতম উপাদান অ্যালকোহল নিয়ে শুরু হয়েছে সমস্যা। ভেষজ গাছ-গাছড়া, জল এবং রেকটিফায়েড স্পিরিট দিয়ে তৈরি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ৯৯ শতাংশ জুড়ে থাকে অ্যালকোহল। আর বহু জায়গাতেই তা পেতে দম বেরিয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় অ্যালকোহল না পাওয়ায় ওষুধ তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে—এমন অভিযোগে সরগরম এই ওষুধ শিল্প।

সূত্রের খবর, রাজ্যে কমবেশি প্রায় ২০০ ছোট-মাঝারি-বড় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্মাতা সংস্থা আছে। মোট ব্যবসার অঙ্ক কমবেশি আড়াইশো কোটি টাকা। নির্মাতাদের একাংশের অভিযোগ, এভাবে চললে এই ওষুধ ব্যবসা রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান বা হিমাচলে পাড়ি দেবে। একেই জিএসটি'র পরিবর্তে বিক্রয় কর বাবদ ২০ শতাংশ বাড়তি খরচ তাঁদের গুনতে হচ্ছে। জিএসটি'র ইনপুট বেনিফিটও তাঁরা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, আবগারি দপ্তরের কর্মী-অফিসারদের একাংশের অসহযোগিতায় ওষুধের জন্য অ্যালকোহল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। বারাকপুর মহকুমার বহু জায়গায় অ্যালকোহলের অভাবে ছোট-মাঝারি হোমিও ওষুধ কোম্পানিগুলিতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। বসে যাচ্ছেন বহু কর্মী।

প্রসঙ্গত, আবগারি দপ্তর থেকে সরকারি ছাড়পত্র পেলে চাহিদামতো অ্যালকোহল কিনতে পারেন নির্মাতারা। আর এই ছাড়পত্র দিতেই আঠারো মাসে বছর ঘুরছে!

সূত্রের খবর, আগে অ্যালকোহল মেডিসিন অ্যান্ড টয়লেট প্রিপারেশন আইন-এর (আবগারি) আওতায় ছিল। সরাসরি নজরদারি করত আবগারি দপ্তরের বিশেষ শাখা। ২০১৭ সালে জিএসটি লাগু হওয়ায় বর্তমানে অ্যালকোহল আর আবগারি দপ্তরের আওতায় পড়ে না। কিন্তু, নতুন নিয়ন্ত্রক না আসায় বর্তমানে আবগারি দপ্তরই বিষয়টি দেখে।

বেঙ্গল হোমিওপ্যাথিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডঃ এ সি দেব বলেন, কী যে সমস্যায় পড়েছি, বলে বোঝাতে পারব না। চাহিদামতো অ্যালকোহল না পাওয়ায় বহু সংস্থায় কমবেশি ৬০ শতাংশ ওষুধ কম তৈরি হচ্ছে। আবগারি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে তিনবার চিঠি দিয়েছি। উত্তর আসেনি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ তথা দপ্তরের মন্ত্রী অমিত মিত্রকেও চিঠি পাঠিয়েছি। এভাবে চললে ব্যবসার ঘোর দুর্দিন আসন্ন। একই মত আর এক নির্মাতা সুদীপ্ত গুহেরও। তিনি জানান, অ্যালকোহলের অভাবে তাঁর ৭০ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন কমে গিয়েছে। অন্যতম বড় হোমিও ওষুধ নির্মাতা সংস্থার কর্ণধার ডাঃ দুর্গাশঙ্কর ভড় বলেন, আমাদের বার্ষিক অ্যালকোহল কেনার কোটা বেশি। মজুত বেশি থাকায় এখনও ওষুধ তৈরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু এভাবে চললে ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কত মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল! জানি না তাঁদের কী হবে। ফেডারেশন অব হোমিওপ্যাথিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অব ইন্ডিয়ার সহ-সভাপতি ডাঃ জি পি সরকার বলেন, একেই অ্যালকোহলে জিএসটি লাগু না করে সরকার সেলস ট্যাক্স নেওয়ায় আমাদের অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, সেইসঙ্গে আবগারি দপ্তরের বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের হেড অফিসের কাজ জেলায় জেলায় ভাগ হওয়ার পর সমস্যা চরমে উঠেছে। অথচ অ্যালকোহল মজুতদাররা বলছেন, তাঁদের স্টকের অভাব নেই। কিন্তু, নির্মাতাদের একাংশ পাচ্ছেন না। একেই উত্তর ভারতে দিন দিন এই ওষুধ ব্যবসা বাড়ছে। এভাবে চললে বাংলার আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে মেসেজ করা হলেও রাত পর্যন্ত তার কোনও উত্তর মেলেনি।