তিন বছর পর থামল হেঁচকি, বাংলাদেশি যুবককে বাঁচালেন কলকাতার চিকিৎসক


'‌হিচকি'‌ সিনেমার অভিনেত্রী রানি মুখার্জি চেয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা হতে। কিন্তু অনবরত হেঁচকি উঠত। তার জন্য নিজের আত্মবিশ্বাসও হারাতে বসেছিলেন। মনের জোরে সমস্যা থেকে বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পান। একই সমস্যায় তিন বছর ভুগছিলেন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ২৪ বছরের যুবক হাসিবুল হাসান। হেঁচকি কোনও কিছুতেই কমছিল না। বহু চিকিৎসক দেখিয়েও কাজ হয়নি। অবশেষে কলকাতায় ইনস্টিটিউট অফ সাইক্রিয়াট্রিতে (‌আইওপি)‌ দু ‌মাসেই শাপমুক্তি ঘটল। হাসিবুল বাংলাদেশে একটি বৈদ্যুতিক সংস্থায় কাজ করতেন। সেই চাকরিও যেতে বসেছিল। মিনিটে ৬০–৭০ বার হেঁচকি ওঠার ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। লজ্জায় বাইরে বেরোতেন না। হতাশায় ভুগছিলেন। অবশেষে বাংলাদেশের এক চিকিৎসকের পরামর্শে কলকাতায় আইওপি–তে আসেন।

বহির্বিভাগে দেখামাত্রই আইওপি–র অধিকর্তা ডাঃ প্রদীপকুমার সাহা ধরে ফেলেন '‌হেঁচকি'র কারণ শারীরিক নয়, মানসিক। চিকিৎসা পরিভাষায় '‌পার্সিস্ট্যান্ট হিচকক ডিসঅর্ডার উইথ সাইকোটিক ডিসঅর্ডার'‌। ডাঃ প্রদীপকুমার সাহা বলেন, '‌এটা একশোভাগ মানসিক সমস্যা। সকলে স্নায়ুরোগ ভেবে চিকিৎসা করেছিল বলে কাজ হচ্ছিল না। আউটডোরে রোগীকে দেখি হেঁচকির চোটে কথাই বলতে পারছে না!‌ তিন মাসের জন্য ভর্তি হওয়ার কথা বলি। ২ মাস ৭ দিন হল চিকিৎসা চলছে। আগের সমস্ত ওষুধ বন্ধ করে ৭ দিন পর নতুন ওষুধ চালু করি। আগের ওষুধগুলোর কোনও ভূমিকাই নেই। সেইসঙ্গে বোঝাতে থাকি, হেঁচকির সঙ্গে শারীরিক কোনও সম্পর্ক নেই। এখন ৯০ ভাগ সেরে গেছে।'‌

রোগী নিজেও ভাবতে পারেননি এটি মানসিক সমস্যা থেকে তৈরি। হেঁচকির চোটে হাসিবুল ভেবেছিলেন এভাবে বেঁচে থেকে লাভ নেই, মরে যাওয়াই ভাল। এখন শুধু দুপুর ও রাতে খাওয়ার সময় হেঁচকি ওঠে। সেটিও কিছুদিনের মধ্যে সেরে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মূলত নিউরো ট্রান্সমিটার ডিসরেগুলেশনের জন্যই এমনটি হচ্ছিল। প্রদীপবাবু জানান, প্রত্যেক মানুষের মস্তিষ্কে কোটি কোটি স্নায়ুকোষ কুণ্ডলী পাকিয়ে একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে থাকে। নিউরো ট্রান্সমিটারগুলি একে অপরের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে বা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ করে। এই কাজে ব্যাঘাত ঘটলেই নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা হয়। সেটাই ওষুধের দ্বারা ঠিক করেন কলকাতার চিকিৎসকেরা। ৫–৭ দিনের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে। বাকি ১০ শতাংশও ধীরে ধীরে সেরে যাবে।