‌সল্টলেকে ১৮ দিন মায়ের দেহ আগলে যুবক


শহরে আবার ফিরল রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া। এবার সল্ট লেকের বিই ব্লকের একটি বাড়ি থেকে বৃদ্ধার পচাগলা দেহ উদ্ধার করল পুলিস। আটক করা হয়েছে দেহ আগলে রাখা ছেলেকে। ছেলের বক্তব্যে অসঙ্গতি মেলায় তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, প্রায় ১৮ দিন আগে মৃত্যু হয়েছে ৭০ বছরের কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের। যদিও জেরায় তাঁর ছেলের দাবি, সাত দিন আগে মারা গিয়েছেন মা। রবিবার দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দিলে পুলিস গিয়ে দরজা ভেঙে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কৃষ্ণার দেহ উদ্ধার করে। এতদিন ওই যুবক কেন আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশীদের মায়ের মৃত্যুর খবর জানাননি তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। যুবক দাবি করেছেন, তিনি সাত দিন আগে মায়ের মৃত্যুর খবর দক্ষিণ কলকাতায় বসবাসকারী বাবার এক বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। ওই বৃদ্ধকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিস। যুবক দাবি করেছেন, তাঁর মা তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, বাড়ির মধ্যেই মৃতদেহ সমাধিস্থ করতে। এই দাবি কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিস আরও জানিয়েছে, বাড়ির বাইরের দেওয়ালে বহু শংসাপত্র, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড সেলোটেপ এবং আঠা দিয়ে আটকানো রয়েছে। বেশিরভাগই কৃষ্ণা ভট্টাচার্যের। একটি শংসাপত্র কৃষ্ণা এবং তাঁর স্বামী গৌরব ভট্টাচার্যের। কিন্তু সেখানে বাবার নাম কেটে মায়ের নামের পাশে প্রয়াত লিখেছিলেন যুবক। তারপর সেটাও কেটে সেখানে মহারানি এলিজাবেথ লিখে দেন। বাড়িতে রান্নার প্রমাণ মেলেনি। এমনকি বাইরে থেকেও খাবার আনানো হত না। তবে স্যান্ডউইচ, বার্গারজাতীয় কিছু শুকনো খাবার মিলেছে।
বাড়ির বিভিন্ন দিকের পাঁচিল ভাঙা। এমনকি ভট্টাচার্যদের পাশের বাড়ির দেওয়ালও ভাঙা। প্রতিবেশীরা পুলিসকে জানিয়েছেন, যুবক প্রায়ই ভাঙচুর করতেন এবং মাকে মারধর করতেন। ভাঙচুরের জন্য থানায় তাঁর নামে অভিযোগও জানানো হয়েছিল। প্রতিবেশীরা আরও বলেছেন, গৌরব ভট্টাচার্য পেশায় এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি প্রদীপের আগুনে পুড়ে মারা যান। ওই বাড়ির সঙ্গে আত্মীয়, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। মায়ের অসুস্থতার খবরও যুবক কাউকে দেননি। পুরো ঘটনা জানতে যুবককে জেরা করা শুরু করেছে পুলিস।