ঘরে ঝুলছে দেহ, দেওয়ালে লেখা ‘আমার পার্সে চিঠি আছে’!

শোক: দেওয়ালে শওকত হোসেনের (ইনসেটে) লেখা ছুঁয়ে কান্না স্ত্রীর। শুক্রবার, একবালপুরে।


ঘরের হলুদ দেওয়ালে পেনসিল দিয়ে উর্দুতে লেখা, 'আমার পার্সে চিঠি আছে'!
সেই লেখার সূত্র ধরেই মৃত এক ব্যক্তির পার্স থেকে চিঠি খুঁজে পান তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, সেটি সুইসাইড নোট। শুক্রবারে ওই ঘটনার পরে ওই চিঠির ভিত্তিতে শওকত হোসেন (৬২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজু করেছে একবালপুর থানার পুলিশ। মৃতের পরিবারের দাবি, শওকতের বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) ধারায় 'মিথ্যা' মামলা রুজু করানো হয়েছিল। টাকার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হত। মৃতের পরিবারের দাবি, এই অবসাদেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের পরিবার। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। 
পুলিশ জানায়, একবালপুর থানার ইব্রাহিম রোডের পাঁচতলা বাড়ির একতলার ঘর থেকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শওকতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের লোকজন তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে ময়না-তদন্তের জন্য শওকতের দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় শওকতের পরিবারের লোকজন একবালপুর থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, শওকতের ছোট ভাই গোলাম মহম্মদ, আত্মীয় লিয়াকত হোসেন, শাহিদ আহমেদ ও আখতার হুসেন নানা ভাবে শওকতের উপরে মানসিক চাপ দিতেন। তাঁকে পকসো মামলাতেও ফাঁসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ দিন মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই গোলাম, লিয়াকত, শাহিদ এবং আখতারেরা এলাকাছাড়া। একবালপুর থানার তরফে জানানো হয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফেরারদের খোঁজ চলছে।

মৃতের ছোট ছেলে সাদ্দাম হোসেন এ দিন জানান, ইব্রাহিম রোডে তাঁদের পারিবারিক বাড়ি নিয়েই বিবাদের শুরু। তাঁর কথায়, ''পারিবারিক জমিতে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেন বাবা। সে জন্য আমার ছয় কাকা এবং জেঠুকে ফ্ল্যাট ও টাকা দিতে হয়। তার পরেও তাঁরা খুশি ছিলেন না। নানা ভাবে আরও টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছিলেন।'' অভিযোগ, বাড়ি বাবদ নতুন করে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে এক দিন শওকতের ঘরে ঢুকে তাঁকে মারধর করেন গোলাম। সে বার একবালপুর থানায় অভিযোগ করেছিলেন শওকত। তাঁর পরিবারের দাবি, তাতে কোনও লাভ হয়নি।

পরিবারের আরও দাবি, বছরখানেক আগে এই বিবাদ চরমে ওঠে। একতলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দার সঙ্গে বিবাদের সময়ে তাঁর সাত বছরের মেয়েকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলে শওকত এবং তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে একবালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পকসো ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। 

যদিও সাদ্দামের দাবি, ''প্রথমে পকসো নিয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। গত সপ্তাহে লালবাজার থেকে পুলিশ এসে থানায় দেখা করতে বলে। বৃহস্পতিবার সেই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে বাবার জামিন নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, শুনানি হয়নি।'' শওকতের স্ত্রী আসগর বিবির অভিযোগ, ''আমার স্বামী কোনও দোষ করেননি। বলেছিলাম, কিছু হবে না। শুনল না, সব শেষ করে দিল।''