কর্মচারীরাই প্রথম অগ্রাধিকার, আদালত অফার মানলেই বেতন দেব : বিজয় মালিয়া


লন্ডন : "কর্মচারীরাই আমার কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। আমার অফার আদালত মেনে নিলে সর্বপ্রথম আমি আমার কর্মচারীদের বেতন দেব।" গতকাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তাঁর প্রত্যর্পণের মামলার শুনানি চলাকালীন একথাই বলেন আর্থিক প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত বিজয় মালিয়া।

বুধবার টুইটারে বিজয় মালিয়া লেখেন, "আমি ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণের মূল অর্থের (আসল) পুরোটাই ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি। দয়া করে তা গ্রহণ করুন।" সে প্রসঙ্গে গতকাল শুনানি চলাকালীন 'পলাতক' ভারতীয় উদ্যোগপতি বলেন, "আমরা যখন কথা বলছি, তখন বিষয়টি নিয়ে কর্নাটক হাইকোর্টে আলোচনা চলছে। তাই হাইকোর্টই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু, আমার কর্মচারীরাই আমার কাছে প্রথম অগ্রাধিকার পায়। গত দু'বছরে আদালতে দুটি পৃথক আবেদন করেছি আমরা। তাতে বলেছি যে, আদালতে যে অর্থ জমা রয়েছে, তা দিয়ে আমার কর্মচারীরাদের বেতন দেওয়া হোক। আদালতের পক্ষ থেকে এখনও এবিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। যদি আদালত আমার অফার গ্রহণ করে, তাহলে সর্বপ্রথম আমি আমার কর্মচারীদের বেতন দেব।"

গতকালই বিজয় মালিয়াকে ভারতে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেয় ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। সেই আদালতের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট জাজ এমা আরবাথনট জানান, বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চক্রান্ত ও বেআইনি আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগগুলি উঠেছে প্রাথমিকভাবে তার সারবত্তা রয়েছে। তাই তাঁকে ভারতে প্রত্যপর্ণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মালিয়ার তরফে মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে অপর্যাপ্ত আলো বা বাতাসের যে অজুহাত দেখানো হয়, তাও নস্যাৎ করে দেয় আদালত। বলা হয়, "এটা (জেলে মালিয়া কোনও বিপদের মুখোমুখি হবেন) বিশ্বাস করার মতো কোনও ভিত্তিই নেই বা জেলে কোনও মানবধিকার লঙ্ঘনের বিপদও নেই। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁর নিজস্ব মেডিকেল কেয়ারের সুযোগ থাকবে।" সেই নির্দেশের পর CBI জানিয়েছে, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিজয় মালিয়াকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেবে। 

তবে, এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন মালিয়া। সেজন্য তাঁকে ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আপাতত তিনি জামিনে মুক্ত থাকবেন। যদিও উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হবেন কি না সে বিষয়ে মুখ খোলেননি বিজয় মালিয়া। বলেন, "আমার আইনি উপদেষ্টারা আদালতের নির্দেশ খতিয়ে দেখছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই আমি পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। আদালতের এই নির্দেশে আমি বিস্মিত নই।" যদি মালিয়া উচ্চতর আদালত তথা কোর্ট অফ আপিলের দ্বারস্থ হন, তাহলে সেখানে বেশ কয়েকমাস প্রত্যপর্ণের মামলাটির শুনানি চলবে। কোর্ট অফ আপিলের রায় যদি মালিয়ার বিরুদ্ধে যায়, তাহলেও তাঁর কাছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাওয়ার রাস্তা খোলা থাকবে। মালিয়া সুপ্রিম কোর্টের কাছে রাইট টু আপিলের আবেদন করতে পারবেন। যে প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে। যদি সেই আবেদন গৃহীত হয়, তাহলে প্রত্যর্পণের মামলাটি ব্রিটেনের শীর্ষ আদালতে উঠবে। যদি ভারতের তরফে লন্ডনের আদালতে লড়া ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন জানায় তা গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম। শুধুমাত্র জরুরিকালীন ভিত্তিতে এই আবেদন গ্রহণ করা হয়। ফলে প্রাথমিকভাবে ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট মালিয়ার প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিলেও তা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শুরু বলে অভিমত আইনি বিশেষজ্ঞদের। 

কিংফিশার এয়ারলাইন্সের হয়ে ৯০০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির অভিযোগ রয়েছে বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে। ১৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে দেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি। এরপর থেকে রয়েছেন লন্ডনেই। 

ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় ED। ED-র তরফ থেকে একাধিকবার তলব করা হলেও আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেননি মালিয়া। ২০১৬ সালের এপ্রিলে বেআইনি আর্থিক রোধ আইনে মালিয়ার বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বিশেষ আদালত। তারপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে CBI আদালত।

তারপর সে বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের তরফে ব্রিটিশ হাইকমিশনের কাছে মালিয়াকে প্রত্যর্পণের আবেদন জানানো হয়। আবেদন করা হয়, বিজয় মালিয়াকে গ্রেপ্তার করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হোক। সেইমতো বিজয় মালিয়াকে গ্রেপ্তারও করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশ। কিন্তু, পরে জামিন পেয়ে যান। ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর ফের তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু, তখনও কিছুক্ষণের মধ্যে জামিন পেয়ে যান তিনি।