অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে দেওয়া হল এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত, অনিশ্চিত গর্ভের শিশুর ভবিষ্যৎ


সরকারি হাসপাতালে ২৪ বছরের এক অন্তঃসত্ত্বাকে দেওয়া হল এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত। যদিও এর ফলে গর্ভস্থ শিশুটি সংক্রমিত হয়েছে কি না,  তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন চিকিৎসকেরা। শিশুটির জন্মের পরই তা জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর বিরুধুনগরের একটি সরকারি হাসপাতালে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বরখাস্ত করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের প্যাথলজি ল্যাবের তিন কর্মীকে।

ঘটনার শুরু ডিসেম্বরের ৩ তারিখে। এক তরুণের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে তা দেওয়া হয়েছিল ওই তরুণীকে। ওই তরুণ এইচআইভি পজিটিভ হলেও তাঁর রক্তে কোনও গণ্ডগোল খুঁজে পাননি সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবের কর্মীরা। কয়েক দিন পর চাকরি করতে বাইরে যাওয়ার জন্য একটি বেসরকারি প্যাথলজি ল্যাবে রুটিন রক্তপরীক্ষার সময় ধরা পড়ে ওই তরুণের রক্ত এইচআইভি পজিটিভ। সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সতর্ক করা হয় সরকারি হাসপাতালটিকে। কিন্তু ততক্ষণে ওই মহিলার দেহে ওই সংক্রমিত রক্ত দিয়ে ফেলেছে সরকারি হাসপাতাল। অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি ইতিমধ্যেই এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।

অবশ্য এই ঘটনা এই প্রথম নয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে এই তরুণ দু'বছর আগে রক্ত দিয়েছিলেন আরেকটি সরকারি হাসপাতালে। তখনও তাঁর রক্তে ধরা পড়েছিল এইচআইভি সংক্রমণের পজিটিভ রিপোর্ট। কিন্তু তা বেমালুম চেপে গিয়েছিল সরকারি হাসপাতাল। তাঁর মেডিক্যাল রেকর্ড রাখা দূরের কথা, বিষয়টি জানানো হয়নি ওই তরুণকেও।

ঘটনা সামনে আসার পরই সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবের তিন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এইচআইভি পজিটিভ তরুণীকে রাখা হয়েছে বিশেষ ওয়ার্ডে। যদিও শিশুটির দেহে সংক্রমণ পৌঁছেছে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। নবজাতক পৃথিবীর আলো দেখার পরই তা বলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। যদিও খারাপ কিছু সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ এইচআইভি ভাইরাস মূলত চারটি উপায়ে এক দেহ থেকে অন্য দেহে সংক্রমিত হয়। যৌন সংসর্গ, সংক্রমিত রক্ত, সংক্রমিত মায়ের দেহ থেকে নবজাতকের দেহ অথবা স্তন্যপানের মাধ্যমে এক দেহ থেকে অন্য দেহে যেতে পারে এই ভাইরাস।

তামিলনাড়ু সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ''একবার নয়, দু'বার গাফিলতির ঘটনা নজরে এসেছে। আমাদের সন্দেহ, প্যাথলজি ল্যাবের কর্মী রক্ত পরীক্ষার সময় এইচআইভি-র জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাটিই করেননি। যদিও এটা ইচ্ছাকৃত নয় বলেই মনে হয়। আমরা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এডস আক্রান্ত তরুণের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।'' পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং একটি চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে।

যদিও পুরো ঘটনা জানার পর ভেঙে পড়েছে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর পরিবার। কয়েক ঘণ্টা আগেও হাসপাতাল থেকে সুস্থ অবস্থায় স্ত্রী ও সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন তার স্বামী। সেখান থেকে হঠাৎ করে পাল্টে গিয়েছে তাঁর দুনিয়া। স্ত্রী এইচআইভি পজিটিভ, সন্তানের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত। সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁর আর্তি, ''আমার স্ত্রী ও তাঁর গর্ভে থাকা সন্তানকে রক্ষা করুন। সরকারি হাসপাতালের উপর থেকে সব ভরসা চলে গেল।''

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সারা দেশে তিন কোটি ৬৯ লক্ষ এইচআইভি পজিটিভ মানুষের মধ্যে চিকিৎসা হয় মাত্র ৫৯ শতাংশ রোগীর।