টিকিয়াপাড়ায় বড় অস্ত্র কারখানার হদিশ, ৪০টি পাইপগান উদ্ধার, ধৃত ৩


হাওড়া: হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় এবার অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলল। হাওড়া সিটি পুলিস মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ গঙ্গারাম বৈরাগী লেনের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল ও মেশিন উদ্ধার করেছে। হাওড়া সিটি পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ এদিন হানা দিয়ে প্রচুর অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশও উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, আরও একজনের খোঁজ চলছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে চারজন এসেছিল। কারখানা করবে বলে তারা ঘর ভাড়া নিয়েছিল। 
পুলিস জানিয়েছে, বেআইনি এই অস্ত্র কারখানা থেকে ৪০টি তৈরি পাইপগান উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ছোট আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা যায়, এরকম বহু যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিস সূত্রের দাবি, যে পরিমাণ যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়েছে, তা দিয়ে প্রায় শতাধিক বন্দুক তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও তিনটে লেদ মেশিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিস যখন কারখানায় হানা দেয়, তখন সেখানে তিনজন ছিল। সেই তিনজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। বাকি একজনের খোঁজে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে। পুলিসের দাবি, ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রগুলি বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের জন্য তারা একমাস আগে থেকেই বরাত পেয়েছিল। সেই মতো সেগুলি তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছিল। দু-এক মাসের মধ্যে সেগুলি সরবরাহ করার কথা ছিল। পুলিস ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কারা বরাত দিয়েছিল, সেবিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে। এমনকী যে ব্যক্তি ধৃতদের বাড়ি ভাড়া দিয়েছিল, সে এই অস্ত্র তৈরির কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, তাও হাওড়া কমিশনারেটের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।

একইসঙ্গে ভিন রাজ্য থেকে এরাজ্যে এসে কারবার চালানোর জন্য কে বা কারা সাহায্য করেছিল, সেবিষয়েও খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। অস্ত্রের বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন লিঙ্কম্যান ধৃতদের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরও খোঁজ শুরু করেছে। হাওড়া কমিশনারেটের পুলিস কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, অস্ত্র তৈরির বড় ধরনের বরাত পেয়েছিল। সেই মতো যন্ত্রাংশও মজুত করা হয়। সিটি পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। অন্যান্য যোগাযোগের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্রের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস আরও জানতে পেরেছে, লিঙ্কম্যানদের মাধ্যমে ধৃতরা আগেই অস্ত্র তৈরির বরাত পেয়েছিল। কিন্তু, ভিন রাজ্যে তৈরি করে এরাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতে খরচ বেশি। তাই ধৃতরা এরাজ্যেই ডেরা অর্থাৎ অস্ত্র তৈরির কারখানা বানাতে চেয়েছিল। সেই মতো ধৃতদের টিকিয়াপাড়ায় ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিসের সন্দেহ, এখানকার কোনও লিঙ্কম্যান আগে থেকেই এই অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, তারই খোঁজ করছে পুলিস।

একইসঙ্গে সাম঩নেই লোকসভা ভোট রয়েছে, তার আগেই জেলায় জেলায় অস্ত্র কেন সরবরাহ করা হচ্ছিল? সেবিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। বিশেষ করে কোনও রাজনৈতিক দলের এবিষয়ে প্রশ্রয় রয়েছে কি না, সেবিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিস সূত্রের দাবি।