শাক-সব্জির রপ্তানি বাড়াতে চাষিদের পাশে রাজ্য


মাঠে ফলেছে দেদার সব্জি। দামও যথেষ্ট কম। চাষিরা যাতে আরও খানিকটা ভালো দাম পান, সে কারণে শাক-সব্জির রপ্তানি বাড়াতে চাইছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই রাজ্যের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে রাজ্যের উদ্যান পালন দপ্তর। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা অ্যাপডার প্রতিনিধিরাও। রপ্তানি বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপও চাইছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন। রাজ্যের তরফে তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, রাজ্যের চাষিদের আয় বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে রাজ্য।
ওয়েস্টবেঙ্গল এফএফভি এক্সপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অঙ্কুশ সাহা জানান, গত পাঁচ বছর ধরেই এ দেশ থেকে কমেছে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ। এ রাজ্যেও গত বছর তা খানিকটা মার খেলেও, এ বছর পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রপ্তানিকারকদের বক্তব্য, কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষ, তার প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা এবং উন্নত প্যাকেজিং পরিকাঠামো। এই পরিকাঠামো গড়ে না-তোলা গেলে গতি পাবে না রপ্তানির মাত্রা। এবিষয়েই রাজ্যের এবং অ্যাপেডার সহযোগিতা চাইছেন তারা। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক পরামর্শদাতা প্রদীপ মজুমদার জানান, রপ্তানিকারকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বৈঠক হয়েছে। রপ্তানিকারকদের তরফে যে প্রস্তাবগুলি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চাষিদের আয় যাতে বাড়ে সে বিষয়ে বরাবরই সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রপ্তানি বাড়াতে রাজ্যের তরফে যা করা সম্ভব, তা রাজ্য করবে।

রপ্তানিকারকদেরই বক্তব্য, রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা কেন্দ্রীয় সরকারেরই। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এ দেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমেছে। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২২৩১ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছর সেই পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮৫৭ কোটি মার্কিন ডলারে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭২ কোটি মার্কিন ডলারে। এ রাজ্যেও গত বছর কমেছিল কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ। গত বছর এ রাজ্য থেকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৯ কোটি টাকা। যা খানিকটা উন্নতির লক্ষণ বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

কৃষির সঙ্কট ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সব সাংসদের কাছেই কৃষিপণ্য রপ্তানির সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরে ই-মেল পাঠিয়েছে রাজ্যর কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন। ইতিমধ্যেই দেশে কৃষির সঙ্কটের বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। এ বিষয়ে রাজ্যের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর দপ্তর থেকেও। এ বিষয়ে দেশের পরিস্থিতির প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের কাছে।

রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ীই, প্রতি বছর এ রাজ্যে যে পরিমাণ শাক-সব্জি উৎপাদন হয়, তার চার ভাগের একভাগই নষ্ট হয়। কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পান, সে কারণে তাদের নিজস্ব কোম্পানি গড়া হচ্ছে। তাদের মাধ্যমেই দেশে-বিদেশে শাক-সব্জি পাঠানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। তবে চাষিদের আরও খানিকটা বেশি দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে রপ্তানির বাজার আরও প্রশস্ত করা প্রয়োজন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে-রও বক্তব্য, এখন কলকাতার খুচরো বাজারেই বেগুন, শিম, মুলোর মতো সব্জিগুলির দাম ২০ টাকার মধ্যে। বাঁধাকপি, ফুলকপিও বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা পিস হিসেবে। কিন্তু চাষিরা যে কোনও সব্জির ক্ষেত্রেই গড়ে দাম পাচ্ছেন ৬-৮ টাকা। নদিয়ার গোয়ালদহের কৃষক রঞ্জন ঘোষ কিংবা হাঁসখালির শুকদেব পালও জানান, তাঁরা গড়ে সব্জির দাম পাচ্ছেন ৫ থেকে ৭ টাকা। কৃষকদের কোম্পানি সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, মাঠে এখনও যে বেগুন-শিম রয়েছে, তাতে দিন কয়েকের মধ্যেই তার দাম আরও কমে নেমে আসবে ১৫ টাকায়।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ

অর্থবর্ষ রপ্তানির পরিমাণ অর্থমূল্য
২০১৬-১৭ ১,৪৯,১৬৩.২০ মেট্রিক টন ৩৪১.৩৭ কোটি টাকা

২০১৭-১৮ ১,০০,১৪৭.৪৮ মেট্রিক টন ১৭৬.৪০ কোটি টাকা

২০১৮-১৯ ৯২,৩৪৮.২৯ মেট্রিক টন ১৬৯.৬১ কোটি টাকা