রং উঠে ছিঁড়ে যাচ্ছে নতুন নোট, ভোগান্তি বেড়েই চলেছে জনতার


রং উঠে যাচ্ছে, কুঁচকে যাচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে ছিঁড়েও যাচ্ছে। ১০ থেকে শুরু করে ৫০, ২০০, ৫০০ কিংবা ২ হাজার— সব নতুন নোটেরই এক অবস্থা। ফলে মহা সমস্যায় সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে পুরনো ১০ থেকে ১০০ টাকার নোটেই তাঁরা ভরসা রাখছেন। কোথাও কারওর পকেটে রাখা ৫০ টাকার নতুন নীল নোট ঘামে ভিজে রাঙিয়ে দিচ্ছে পকেট। তো কারওর হাতের নতুন ২০০ টাকা নোট জল লেগে রং উঠে, কুঁচকে যাচ্ছে। দ্রুত ছিঁড়েও যাচ্ছে। সেই নোট অন্য কাউকে দিলে তিনি নিতে চাইছেন না। ব্যাঙ্কও নিতে চাইছে না। পুরনো ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোট নিয়ে আরেক সমস্যা। বেশির ভাগই ছেঁড়া, ফাটা। কোনওটা সেলোটেপ দিয়ে আটকানো। বাজারে সবজি বিক্রেতা, মাছওয়ালাদের দিলে তাঁরা বদলে দিতে বলছেন। অথচ ব্যাঙ্কে গেলে এরকমই নোটের বান্ডিল দিচ্ছে। হাত বদল হয়েও এ ধরনের নোট সাধারণের কাছে আসছে।

কেন এমন হচ্ছে?‌
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নাগর জানিয়েছেন, টাকা ছাপানোর পর উন্নত ড্রাইং মেশিনে সেটি শুকিয়ে নিতে হয়। কারেন্সি নোট ছাপা হয় অত্যাধুনিক যন্ত্রে। কোনও কারণে ছাপার কালির গুণগত মান কিংবা ছাপানোর পর ড্রাইং মেশিনে গোলমাল হলে এ সমস্যা হতে পারে। মুদ্রণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনও হতেই পারে  একটা সময়ে নোট ছাপানোর সময় এর কোনও একটা সমস্যা হয়েছিল। সেই নোটগুলি ব্যাঙ্ক হয়ে বাজারে চলে এসেছে। ফলে রং উঠে যাচ্ছে। কাগজের মান ঠিক না থাকলে তা ছিঁড়ে যেতে পারে।

তা না হয় হল কিন্তু ছেঁড়া, ফাটা নোট কেন?‌ অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, নোট বাতিল–কাণ্ডের আগে বহু ছেঁড়া, ফাটা নোট বাতিল হয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভল্টে পড়েছিল। সেগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পড়ে নষ্ট করে ফেলা হয়। নোট বাতিলের সময় নগদের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় সেই ১০, ২০, ৫০ এবং ১০০ টাকার নোট বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলি হাত বদল হতে হতে আরও জীর্ণ হয়েছে। বেগুনি রঙের নতুন ১০০ টাকার নোট বাজারে এলেও তা যথেষ্ট নয়। ফলে পুরনো নোংরা, ছেঁড়া নোটই ভরসা।

সমাধান কী?‌
এদেশে টাকা ছাপা হয় নাসিকের কারেন্সি নোট প্রেস, মধ্যপ্রদেশের দিওসের ব্যাঙ্ক নোট প্রেস, মাইসোরের ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ প্রাইভেট লিমিটেড এবং পশ্চিমবঙ্গের শালবনিতে। এর মধ্যে মাইসোরের কেন্দ্র থেকে ছাপা হয় ৫০০ এবং ২ হাজার টাকার নোট। নতুন ১০, ৫০, ১০০ এবং ২০০ টাকার নোটগুলি দেশের অন্য কেন্দ্রগুলিতে। টাকা ছাপার কাগজ তৈরি হয় মাইসোরের কারেন্সি পেপার মিলে। ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, নোট বাতিল কাণ্ডের পর নতুন টাকা ছাপা এবং এটিএমে সেই টাকাগুলি রাখার ক্যাসেটের রিক্যালিব্রেশন করতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। তারপরও দেশের বহু এটিএমেই নতুন নোট রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা হয়নি।‌‌ নতুন নোটের মানও ঠিকঠাক নয়। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। যতক্ষণ না উপযুক্ত মানের কাগজ এবং ছাপা না হছে ততক্ষণ এই ভোগান্তি চলবে।‌