সীমান্তে পাক সমরসজ্জা, যে কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য পাল্টা মারে তৈরি দিল্লিও


নয়াদিল্লি : সীমান্তজুড়ে সাজ সাজ রব। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, ছোট ও মাঝারি পাল্লার আগ্নেয়াস্ত্র মোতায়েন করে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করেছে পাকিস্তান। পাল্টা মোকাবিলায় তৈরি ভারতও। সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন মিসাইল, ট্যাঙ্ক মোতায়েন করছে নয়াদিল্লি। তৈরি করা হচ্ছে বাঙ্কার। জোরদার করা হচ্ছে নজরদারি ব্যবস্থাও। সীমান্তের দু'দিকেই তুঙ্গে সমরসজ্জা।

রবিবার গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনা সক্রিয়তা শুরু করেছে পাকিস্তান। মোতায়েন করা হচ্ছে প্রায় ৬০০টি ট্যাঙ্ক। এর মধ্যে চীনের টি-৫৯ এবং টি-৬৯ ট্যাঙ্কের ১৭টি ইউনিট ছাড়াও রয়েছে আল-জহর ট্যাঙ্ক, ইউক্রেনের চি-৮০-ইউডি এবং টি-৮৫-ইউডি ট্যাঙ্ক। রাশিয়া থেকে আনা টি-৯০ ট্যাঙ্কও সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, চীনের ভিটি-৪ এবং ইউক্রেনের ওপোল্ড-পি ট্যাঙ্ক কেনার ভাবনাও রয়েছে পাকিস্তানের।

সূত্রের খবর, ভারত-পাক সীমান্তবর্তী এলাকার সেনা ছাউনিগুলিতে যে ট্যাঙ্কগুলি মোতায়েন করা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই স্বল্পপাল্লার। তিন থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ট্যাঙ্কগুলি। শুধুমাত্র ট্যাঙ্ক নয়, বসানো হচ্ছে দুরপাল্লার একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রও। ইতালিতে তৈরি ২৪৫ ১৫০মিমি এসপি মাইক-১০ বন্দুকের বরাত দিয়েছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই ওই ক্যাটিগরির ১২০টি বন্দুক হাতে এসেছে ইসলামাবাদের। সীমান্তবর্তী এলাকায় তা মোতায়েনও করা হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, বাহিনীকে শক্তিশালী করতে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৩৬০টি ট্যাঙ্ক কেনার পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান। যার মধ্যে ২২০টি ট্যাঙ্ক কেনা হবে চীনের থেকে।

পাল্টা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার ঢেলে সাজিয়ে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করেছে ভারতও। যদিও ৬০ হাজার কোটি টাকার ফিউচারিস্টিক ইনফ্যান্টরি কমব্যাট ভেহিকেল (এফআইসিভি) সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ নানা কারণে থমকে রয়েছে। বর্তমানে ভারতের হাতে রয়েছে টি-৯০, টি-৭২ এবং অর্জুন ট্যাঙ্ক। শক্তির বিচারে যা সহজেই টেক্কা দেবে পাকিস্তানকে। পাশাপাশি, কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখার ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে ৬ হাজার ৩০০টি বাঙ্কার তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র নওসেরা ও রাজৌরি সীমান্ত এলাকায় তৈরি হচ্ছে ১০০টি বাঙ্কার। রাজস্থান সীমান্তেও তৈরি করা হচ্ছে নতুন বাঙ্কার। মরুভূমিতে পাকিস্তানের ট্যাঙ্কবাহিনী ধ্বংস করতে বসানো হচ্ছে নাগ ক্ষেপণাস্ত্র। অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) নাগকে ভূমি এবং আকাশ, দুই জায়গা থেকেই ছোঁড়া যায়। প্রতিপক্ষের ট্যাঙ্কই মূলত এই ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য। লঞ্চিং প্যাড থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে থাকা ট্যাঙ্ককেও নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারে নাগ। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বসানো হচ্ছে আকাশ মিসাইল ব্যবস্থা। সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় আরও বেশি সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দেওয়ার জন্য সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বারংবার সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক বাহিনী। বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গি দমনে ভারতকে ব্যস্ত রেখে সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে নেওয়াই লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু ইসলামাবাদের এই পরিকল্পনার আভাস পেয়েই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পাল্টা স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে নয়াদিল্লি। যুদ্ধ পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি ভারতও।