দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে রুমকিদেবীর অর্কিড ব্যবসা


রায়গঞ্জ : নিজের ইচ্ছেতেই রীতিমতো ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন রায়গঞ্জের বীরনগরের বাসিন্দা রুমকি মোদক। একসময় ঘর সাজানোর নেশায় নিয়ে আসা অর্কিড এখন তাঁর পেশায় পরিবর্তিত হয়েছে। বাড়ির ছাদে আস্ত গ্রিনহাউজ় তৈরি করে অর্কিডের চাষ করেই ছোটো এই শহরের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন বিশ্ব আঙিনায়। তাঁর চাষ করা অর্কিড পৌঁছে গেছে ফ্রান্সেও। তাছাড়া, নিত্যদিনই নিজের ব্যবসার জন্য তৈরি করা ওয়েবসাইটে পাওয়া অর্ডার দেখে বিদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রায় ২০০ প্রজাতির ১৫০০ প্রকারের অর্কিড। যদিও আয় কত হয় জানতে চাইলে রুমকিদেবী সহাস্যে এড়িয়ে গিয়ে বলেন,"ভালোই হয় না হলে ব্যবসাটা মনোযোগ দিয়ে করছি কেন বলুন তো?"

রুমকিদেবীর বরাবরই ঘর সাজানোর শখ রয়েছে। পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে একসময় অর্কিডের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ঘর সাজানোর জন্য কয়েকটি প্রজাতির বেশকিছু অর্কিড নিয়ে আসেন। ক্রমেই অর্কিডের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে তাঁর। বিভিন্ন সময়ে সেই গাছগুলির ছবি তুলে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করতেই সেগুলির সম্পর্কে তার বন্ধুরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেন। অনেকে কয়েকটি অর্কিড এনে দেওয়ার অর্ডারও করতে থাকেন। পরবর্তীকালে প্রায় বছর তিনেক আগে এক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিজের বাড়ির ছাদেই গড়ে তোলেন একটি আস্ত গ্রিনহাউজ়। 

প্রাথমিকভাবে কালিম্পং, কার্শিয়ংসহ পাহাড়ের বেশকিছু জায়গা থেকে অর্কিড নিয়ে এসে চাষ করতেন রুমকিদেবী। সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেগুলি বিক্রি করতে শুরু করতেন। কিন্তু,ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু করায় নিজের একটি ওয়েবাসইট বানিয়ে ফেলেন তিনি। সেখানে তাঁর চাষ করা অর্কিডের ছবি দেওয়া শুরু করলে নতুন নতুন প্রজাতির চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপর স্বামীর সাহায্য নিয়ে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স তৈরি করে বর্তমানে ব্যাঙ্কক,তাইওয়ানের মতো দেশ থেকে অর্কিডের চারা এনে চাষ করছেন তিনি। তাঁর গ্রিনহাউজ়ে বর্তমানে প্রায় ১৫০০ প্রকারের অর্কিড রয়েছে। সেখানে সাধারণ অর্কিড যেমন রয়েছে ঠিক তেমনই রয়েছে পতঙ্গভুক উদ্ভিদও। 

রুমকিদেবী বলেন,"প্রায় তিনবছর আগে থেকে অর্কিডের চাষ করছি। আমার তৈরি করা ওয়েবসাইটে দেশ-বিদেশ থেকে অর্ডার পাই। ফ্রান্সেও আমার চাষ করা অর্কিড পাঠিয়েছি। ভালোলাগার বিষয় বলুন বা নেশা সেটা যখন পেশায় পরিণত হয়ে যায় কার না ভালো লাগে। আমার স্বামী আমাকে এই বিষয়ে খুব সাহায্য করেন।" 

মৃণালকান্তিবাবু বলেন, "স্ত্রী সাবলম্বী হয়েছেন। হাতখরচের পাশাপাশি তার আয়ের টাকায় সংসারের অনেক ব্যয় বহন হয়। এটা দেখতে সত্যিই ভালো লাগে। আগামীতে কোনও নারী এই চাষের পদ্ধতি শিখে স্বনির্ভর হতে চাইলে অবশ্যই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।"