কৃষকদের বাড়ি গিয়ে ধান কিনছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা


প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি মতো কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কেনার কাজ শুরু করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সঙ্ঘের মহিলারা। ফড়েদের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচাতে এমন পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছিল আউশগ্রাম ২ ব্লক প্রশাসন। সোমবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে এই প্রক্রিয়া। আউশগ্রামের চারটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত মোট ৭০০ কুইন্টাল ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে আউশগ্রাম ২ বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, 'গত সোমবার ভাল্কি পঞ্চায়েতের সুয়াতা গ্রাম থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছিল। চারটি গোষ্ঠীর সদস্যারা রামনগর, জামতাড়া, সুয়াতা, নৃসিংহপুর, মালচা গ্রামের মোট ৪০ জন কৃষককে টোকেন বিলি করেছিলেন। ইচ্ছুক চাষিদের থেকে এখনও পর্যন্ত ৭০০ কুইন্টাল ধান কেনা হয়েছে। এখনও পুরোদমে কাজ চলছে। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে এই কাজ শুরু করেছিলাম, তাতে সফল হয়েছি।'

আউশগ্রাম ২ ব্লকের যে সমস্ত গ্রাম কৃষিমান্ডি থেকে দূরে অবস্থিত, সেখানকার কৃষকরা যাতে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন সেই উদ্দেশ্যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। এই ব্লকের পাঁচটি অঞ্চল মিলে চারটি গোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত এই কাজ করছে। কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি চালকল ও কৃষিমান্ডিতেও গিয়ে তদ্বির করছেন সঙ্ঘের মহিলারা।

প্রশাসনের এই পদক্ষেপে খুশি স্থানীয় কৃষকরা। জামতাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মির্জা বলেন, 'সরকারের এই উদ্যোগে আমরা খুব খুশি। আমাদের মতো বহু ছোট চাষিই আগে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করত। কারণ অন্য কোনও উপায় ছিল না। কিন্তু এখন সঙ্ঘের মহিলারা বাড়িতে এসে ধান কেনায় আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। ফড়েদের কাছে ধানের দাম ঠিকমতো পেতাম না। এখন সরকারি ন্যায্য মূল্যে ধানের দাম পাচ্ছি। আমি এই বছর সঙ্ঘের মাধ্যমে ৩৫ বস্তা ধান বিক্রি করেছি।'

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে আউশগ্রাম ২ বিডিও, কৃষি দফতরের প্রতিনিধি, পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা মিলে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরই এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিডিও বলেন, 'এই পদ্ধতিতে ধান কেনা শুরু হলে সঙ্ঘের মহিলারাও কিছু আয় করতে পারবেন। তাঁরা নির্দিষ্ট কমিশনও পাবেন। পাশাপাশি ফড়ে বা দালালদের কারবার বন্ধ হয়ে যাবে।' বিডিও আরও জানিয়েছেন, ভেদিয়া এলাকা থেকে কৃষিমান্ডির দূরত্ব অনেকটাই বেশি। সেই কারণে ভেদিয়া এলাকায় ধান কেনার জন্য একটি শিবির করা হবে। এই প্রসঙ্গে মহিলা মহা সঙ্ঘের সেক্রেটারি মহসিনা বেগম চৌধুরি বলেন, 'এই চার দিনে চাষিদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি আমরা। ভেদিয়ার তিনটি চালকল এখন আমাদের কাছ থেকে ধান কিনছে। এলাকার বহু চাষিই আমাদের কাছে ধান বিক্রির ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এক কথায় বলতে গেলে, আউশগ্রাম ২ ব্লকে ফড়েদের রমরমা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।'