পর্ন সাইটে ছবি দেখেও তদন্তে আপত্তি তরুণীর


কিছুদিন ধরেই তাঁকে ঘিরে ফিসফাস লক্ষ করছিলেন। তাঁকে ঘিরে কিছু একটা নিয়ে যে পাড়ায়, স্কুলে গুঞ্জন যে চলছে, তা বুঝতে পারছিলেন সোনারপুরের একটি হাইস্কুলের ওই শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর দ্বারস্থ হতে পরিষ্কার হল চিত্র। একটি পর্ন সাইটে স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি! চার মিনিটের সেই ভিডিয়ো দেখে বাকরহিত মাস্টারমশাই। স্ত্রীর বড়সড় বিপদের আশঙ্কায় তখন দিশেহারা স্বামী। স্ত্রী-র দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। যদিও থানায় অভিযোগ জানানোয় তেমন গা নেই তাঁর। স্বামী নিজেই ছুটলেন থানায়।

গত জানুয়ারি মাসে বারুইপুর থানা অভিযোগ নিলেও তদন্ত এগোয়নি। ভবানী ভবন সাইবার সেল থেকে জেলা পুলিশ সুপার --- সর্বত্র ছুটেছেন ওই শিক্ষক। শেষ পর্যন্ত থানা স্বামী-স্ত্রীকে ডেকে প্রশ্ন শুরু করতে স্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তিনি তদন্ত চাননা। এখন স্বামীর বিশ্বাস, পর্ন ছবির বড়সড় কোনও র্যাকেট জড়িত স্ত্রীও। ঘটনার জেরে তাঁর সামাজিক সম্মান ধুলিসাৎ। ওই শিক্ষক তাই বিবাহবিচ্ছেদ চান। কিন্তু পুলিশি তদন্ত ছাড়া স্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সেই তদন্ত করতে পারে পুলিশই। ওই শিক্ষকের আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, 'পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন মাস্টারমশাই।' আগামী শুক্রবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে তার শুনানি হতে পারে বলেও ইন্দ্রজিৎ জানান।

বারুইপুরের বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে ২০১০ সালে বিয়ে হয় ওই শিক্ষকের। বছর দু'য়েক পরে তাঁদের একটি সন্তান হয়। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো চলছিল সংসার। যদিও বিয়ের কিছুদিন পর থেকে প্রায়ই বাপের বাড়ি চলে যেতেন স্ত্রী। বেশ ক'দিন সেখানে থেকে ফিরতেন স্বামীর কাছে। আবার মাঝে মাঝে পিকনিক বা বন্ধুদের সঙ্গে শপিং মলে কেনাকাটায় যাওয়ার কথা বলে সারাদিন বাইরে থাকতেন তিনি। স্বামী প্রয়োজন মতো হাত খরচও দিতেন। মাঝেমাঝে তিনি স্ত্রীর সঙ্গীও হতে চাইতেন। কিন্তু তাতে আপত্তি ছিল তরুণীর। দম্পতির সম্পর্ক কখনই খুব খারাপ না হলেও আইনজীবীর মতে, তার মধ্যে আন্তরিকতার অভাব ছিল। সেই সময়ই মধ্যবিত্ত পরিবারের বধূ কোনও চক্রে জড়িয়ে পড়েন বলে স্বামীর অনুমান। সাহিত্য-সিনেমায় এমন কথা প্রায়শ তুলে ধরা হলেও নিজের ঘরে যে এ রকম কিছু ঘটেছে, তা আঁচ করে রীতিমতো বিপর্যস্ত মাস্টারমশাই। একজন পুরুষের সঙ্গে স্ত্রী-র অতি অন্তরঙ্গ-আপত্তিকর ছবি ওয়েবসাইটে দেখার পরে তরুণীর আচরণ এখন ভাবাচ্ছে স্বামীকে। বাইপাসে ধারে একদিন অচেনা এক পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীকে 'ঘনিষ্ঠ' ভাবে কথা বলতে দেখেও তখন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে এখন তা ভাবাচ্ছে শিক্ষককে। 

আইনজীবী ইন্দ্রজিতের বক্তব্য, 'স্ত্রী আপত্তি করায় পুলিশ ওই ভিডিয়ো ফুটেজ নিয়ে তদন্ত না করতে চাওয়া বড় বেআইনি। কোনও অপরাধের ঘটনা লিখিত ভাবে জানিয়ে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন একজন নাগরিক। আমার মক্কেল সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন, একটা র৵াকেট নীল ছবির চক্র চালাচ্ছে। ঘটনাচক্রে সেই চক্রে তাঁর স্ত্রী জড়িত থাকতে পারেন। কে বা কারা এমন চালাচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করতে আবেদন জানানো হয়েছে। অথচ পুলিশ স্ত্রী-র আপত্তিতে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।'