আন্দামানে প্রবল ঝড়, আটকে কয়েকশো বাঙালি পর্যটক


অপেক্ষা: আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে শনিবার। ছবি উপকূলরক্ষী বাহিনীর সৌজন্যে।
ঝোড়ো হাওয়া কমেছে কিন্তু সাগর এখনও উত্তাল। নাগরিক যোগাযোগও কার্যত বিচ্ছিন্ন। তাই উপকূলরক্ষী বাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে রয়েছেন আন্দামানের নীল ও হ্যাভলক দ্বীপে আটকে পর্যটকেরা। কয়েকশো বাঙালির পাশাপাশি সেই দলে রয়েছেন বিদেশি নাগরিকেরাও।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল। সেই 'অতিথি' শনিবার রাতে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে। তাইল্যান্ড তার নাম দিয়েছে পেতাই। ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে যাবে। তার জেরেই উত্তাল আন্দামান সাগর। তবে উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, শনিবার থেকে ঝো়ড়ো হাওয়ার দাপট কমেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা পর্যন্ত হ্যাভলক থেকে ৮০ জন বিদেশি নাগরিক-সহ ৩০৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নীল দ্বীপ থেকেও শ'খানেক পর্যটককে উদ্ধার করে পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রয়েছে ডুবুরি, উদ্ধারকারী নৌকাও। তবে দুই দ্বীপ মিলে এখনও প্রায় আড়াই হাজার পর্যটক আটকে রয়েছে। সাহায্যে নেমেছে আন্দামান পুলিশ-প্রশাসন।

হ্যাভলক দ্বীপে আটকে পড়েছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্চিতা দণ্ড, তাঁর স্বামী, বোন ও ভগ্নিপতি। রাতে সঞ্চিতাদেবী বলেন, ''একটা জাহাজ এসে এক দল পর্যটককে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। আমরা উঠতে পারিনি। আমাদের মতো আরও অনেকে পরের জাহাজের জন্য অপেক্ষা করছে।''

একই পরিস্থিতি নীল দ্বীপেও। কলকাতা থেকে ৪৫ জনের দলের সঙ্গে সেখানে বে়ড়াতে গিয়েছেন হাওড়ার বাসিন্দা, কলকাতার পুলিশের অফিসার রমেন রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ''প্রতি জাহাজে অল্প অল্প করে লোক তোলা হচ্ছে।

তাই জাহাজে উঠতে বিশাল লাইন দিতে হচ্ছে।'' পর্যটকেরা জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই আবহাওয়া অত্যন্ত বিগড়ে গিয়েছিল।
অসামরিক সব ধরনের জাহাজ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুযোগ বুঝে কোনও কোনও হোটেল এক লাফে ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত খাবার ও জলের অভাব না থাকলেও দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ না হলে সেই সমস্যাও দেখা দেবে।

এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় পর্যটকদের পরিজনেরাও। সঞ্চিতাদেবীর বোনঝি তানিয়া মুখোপাধ্যায় কলকাতা থেকে মাসিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, আন্দামানে একমাত্র বিএসএনএল পরিষেবা কাজ করছে। তাই যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে।

আটকে পড়া পর্যটকদের অনেকের আজ, রবিবার পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফেরার বিমান ধরার কথা। কলকাতা ও পোর্ট ব্লেয়ার বিমান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। উড়ান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আটকে পড়া পর্যটকেরা নির্দিষ্ট বিমান ধরতে না পারলে বিকল্প উ়়ড়ানের সুযোগ দেওয়া হবে।

এ দিকে আন্দামানে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির চার কর্মী কাজ করতে গিয়ে মারাত্মক ভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। বায়ুসেনা জানিয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই তাদের বিমানে চাপিয়ে রাতে এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়। রাতে পোর্ট ব্লেয়ার এয়ার ফিল্ডে সুপার হারকিউলিস বিমান ল্যান্ড করিয়ে চার জনকে এয়ার লিফট করে পানাগড়ে নিয়ে আসা হয়েছে।