আমেরিকায় পাচারে মিলত শিশু পিছু তিরিশ লাখ


কলকাতা: আমেরিকা সহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতে শিশু পিছু নেওয়া হত তিরিশ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত ১৩ জনকে এই টাকার বিনিময়ে পাঠানো হয়েছে ভিন দেশে। এই কাণ্ডে ধৃত অন্যতম অভিযুক্ত ময়ূর ব্যাসকে জেরা করে এমনই তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। তবে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যাটা আরও বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। বাচ্চা বিক্রি করে আসা অর্থ তারা কোথায় বিনিয়োগ করেছে, তা নিয়েও খোঁজখবর চলছে। সেই কারণে অভিযুক্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে অন্য সমস্ত নথি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন অফিসাররা।
শিশু পাচারের ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিস। যার মধ্যে রয়েছে গুজরাতের বাসিন্দা, চক্রের অন্যতম পাণ্ডা ময়ূর ব্যাস। তবে তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারছেন, চক্রে নাসির নামে এক যুবকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যার মাধ্যমেই শিশুগুলিকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী মার্কিন দূতাবাসের কর্মী। শিশুদের বেআইনিভাবে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনও সাহায্য নাসির পেয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই কারণে ওই মহিলাও সন্দেহের তালিকায়। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বড় কারও সহযোগিতা ছাড়া এভাবে এতগুলি শিশুকে পাচার করা সম্ভব নয়। আর ১৫ বছরের নীচে কোনও শিশুরই বায়োমেট্রিক পরীক্ষা নেওয়া হয় না। এর সুযোগই নিয়েছে পাচারে জড়িত অভিযুক্তরা। আর আইনের এই ফাঁকের বিষয়টি দূতাবাসের কর্মী ভিন্ন কারও কাছ থেকে জানা সম্ভব নয় বলেই তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য। সেই কারণেই মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন অফিসাররা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিও জোগাড় করা হচ্ছে।

তদন্তে উঠে আসছে, গুজরাতেই এই চক্রের শিকড় রয়েছে। সেখান থেকেই শিশু নিয়ে এসে পাচার করা হয়েছে আমেরিকায়। গুজরাত ছাড়া কলকাতা এবং আমেরিকাতেও পাচার চক্রের এজেন্টরা ছড়িয়ে রয়েছে। গুজরাত থেকে বাচ্চা কলকাতায় নিয়ে আসার পর, হাওড়ার একটি জায়গায় তাদের জন্মের শংসাপত্র তৈরি করা হতো। তারপর ওই নথি দিয়ে তৈরি করা হত পাসপোর্ট। এখানকার এজেন্টরা আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে সেখানকার এজেন্টদের হাতে তুলে দিত। তারা পৌঁছে দিত সেখানকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। আমেরিকায় থাকা যে সমস্ত দম্পতির শিশু প্রয়োজন, তারা সেখানকার এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। কখনও কখনও আবার সরাসরি গুজরাতের এজেন্টরা কথা বলত আমেরিকায়। ধৃতদের দাবি, এক একজনের কাছ থেকে নেওয়া হত তিরিশ লক্ষ টাকা। খুব ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমেই এই কারবার চালানো হত, যাতে সহজে পুলিস প্রশাসনের নজরে না আসে।