বাস-ট্যাক্সি সহ বাণিজ্যিক গাড়িতে বসাতে হবে ট্র্যাকিং ডিভাইস ও প্যানিক বাটন


কলকাতা: গণ পরিবহণে যাত্রীদের নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত হতে চলেছে। বাস-ট্যাক্সি সহ বাণিজ্যিক গাড়িতে ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস (ভিএলটি) বা নজরদারি প্রযুক্তি এবং প্যানিক বাটন বসানোর নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। নতুন গাড়ি নামানোর ক্ষেত্রে এই নির্দেশ আগামী বছরের শুরু থেকেই কার্যকর হচ্ছে দেশজুড়ে। এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই প্রতিটি রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নয়া ব্যবস্থার উপযোগী কন্ট্রোল রুম চালু করতে হবে রাজ্যে। পরিবহণ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ধরনের ব্যবস্থায় গণ পরিবহণের উপর নজরদারি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। তাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা আরও বাড়বে। কমবে অপরাধ প্রবণতা। যাত্রীদের পাশাপাশি গাড়ির সুরক্ষায় এই নতুন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা মেনে নিচ্ছেন বাস মালিকরাও। তবে একইসঙ্গে নয়া প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।

কেন্দ্র যে নির্দেশিকা রাজ্যগুলিতে পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে যে সব বাণিজ্যিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হবে, সেগুলিতে বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস এবং প্যানিক বাটন। ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস গাড়িতে থাকলে তার গতিপ্রকৃতি কন্ট্রোল রুমে বসেই জানা যাবে। যাত্রীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, যাত্রীদের অনেক সময় অভিযোগ থাকে, কিছু বাস পুরো রুট না গিয়ে মাঝরাস্তা থেকে ফিরে যায়। নির্ধারিত রুট দিয়ে বাস না যাওয়ার মতো অভিযোগও অনেক সময় ওঠে। এসব ক্ষেত্রেও কন্ট্রোল রুমে বসে বিষয়টি ধরা যাবে এবং প্রয়োজনে বাসকর্মীদের সতর্ক করা যাবে। আবার বাস-ট্যাক্সির মধ্যে যে কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনায় ব্যবহার করা যাবে প্যানিক বাটন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, 'সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকলস রুল' সংশোধন করেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস এবং প্যানিক বাটন সংক্রান্ত নির্দেশিকা থেকে ছাড়ের আওতায় রাখা হয়েছে দু'চাকার যান, ই-রিকশ, তিন চাকার যান এবং সেইসব বাণিজ্যিক গাড়ি, যেগুলি চালানোর জন্য পারমিটের দরকার হয় না।

নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে এই দুই ব্যবস্থা ২০১৯ সালের গোড়া থেকে বাধ্যতামূলক করা হলেও, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন হওয়া গাড়ির ক্ষেত্রে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছাড়া হয়েছে রাজ্যগুলির উপরে। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হবে, সেগুলিতে কবে, কতদিনের মধ্যে ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস এবং প্যানিক বাটন বসাতে হবে, তা ঠিক করবে রাজ্যগুলি।

কেন্দ্রের নয়া নির্দেশ নিয়ে কী বলছেন বাস মালিকরা? অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা ঠিক যে, নয়া প্রযুক্তিতে যাত্রীদের সুরক্ষা আরও বাড়বে। তবে এটাও ঠিক যে, এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে ব্যয়ও বাড়বে। তাতে মালিকদের উপরে আর্থিক বোঝা চাপবে। প্রায় একই সুর জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, যে কোনও জিনিস চালুর আগে গাইডলাইন এবং পরিকাঠামো তৈরি জরুরি। পরিকাঠামো না থাকলে নতুন প্রযুক্তি বসিয়েও লাভ হবে না।