রোজভ্যালির বন্ধ থাকা গয়নার দোকান থেকে ৪২ কোটি টাকার সোনা বাজেয়াপ্ত করল ইডি


কলকাতা: আমানতকারীদের টাকাতেই স্বর্ণবিপণী সংস্থায় সোনা কিনেছিল রোজভ্যালি। একাধিক কাগুজে কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে মূল সংস্থা থেকে টাকা বাইরে বের করে আনে তারা। শুধু তাই নয়, ভুয়ো ঋণ দেখিয়ে স্বর্ণবিপনী সংস্থার জন্য গয়না কেনা হয়েছিল। আসলে সেই টাকার পুরোটাই ছিল আমানতকারীদের, সে বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এরপরই রোজভ্যালির সোনার দোকানের সমস্ত গয়না বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। যার পরিমাণ প্রায় ৪২ কোটি টাকা বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে এই স্বর্ণবিপণী সংস্থা যে বাড়িতে তৈরি করা হয়েছিল, সেটিও বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।

রোজভ্যালিকাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই তাদের স্বর্ণবিপণী 'অদ্রিজা'র দিকে নজর ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। এমনকী চিটফান্ড ব্যবসা লাটে ওঠার পরেও দীর্ঘদিন ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছে এই সংস্থা। রাতারাতি বদল করা হয় ডিরেক্টরও। কিন্তু সোনার দোকান করার জন্য টাকা কোথা থেকে পেলেন রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। সেখান থেকেই জানা যায়, এই সংস্থা খোলার জন্য একটি কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি।

এই কোম্পানির আদৌ অস্তিত্ব রয়েছে, নাকি তা কাগুজে—সেই নথি জোগাড় করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, কোম্পানির ডিরেক্টর থেকে শুরু করে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে রোজভ্যালি কর্তার আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠরাই রয়েছেন। আর তা খোলা হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। লেনদেনের যে অঙ্ক দেখানো হয়েছে, তা বাস্তবে হয়নি। তখনই তদন্তকারী অফিসাররা বুঝতে পারেন, টাকা সরানোর জন্যই এগুলি খোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এমন তিনটি কোম্পানির হদিশ মিলেছে। অফিসাররা জানতে পেরেছেন, আমানতকারীদের টাকা রোজভ্যালির 'মাদার' অ্যাকাউন্ট হয়ে ঘুরপথে জমা পড়েছে এখানে। এরপর সেই টাকা ঘুরেছে আরও দুটি কোম্পানিতে। 'অদ্রিজা' যে কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়েছিল, সেখানে ওই টাকা গিয়েছে। এমনকী ঋণ পরিশোধও করা হয়নি। কেনাবেচা কেবল খাতায়-কলমে হয়েছে, বাস্তবে কিছুই ঘটেনি। এর আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তর হয়ে গিয়েছে। ঋণ হিসেবে যে টাকা দেখানো হয়েছে, তা আসলে রোজভ্যালিতে আমানতকারীদের জমা রাখা অর্থ। এই টাকাতেই কেনা হয় সোনা। এমনকী দোকানের জন্য কেনা জমিও আমানতকারীদের টাকাতেই।
তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পেরেছেন, এই সোনা সবটাই দুবাই থেকে নিয়ে আনা হয়েছে। ঋণ হিসেবে দেখানো অর্থ হাওলার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। রোজভ্যালি কর্তা ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা যখন বিদেশে গিয়েছেন, তখন তাঁরা নগদ নিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকে সোনা কিনে তা নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতায়। এভাবে আমানতকারীদের টাকায় সোনা কিনে গয়না বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি করেছেন গৌতম কুণ্ডু। যা পুরোটাই বেআইনি। সব নথি আসার পর দোকানের সমস্ত গয়না বাজেয়াপ্ত হয়েছে।