উন্নাও গণধর্ষণকাণ্ডে এ বার নির্যাতিতার বিরুদ্ধেই জালিয়াতির মামলা

বছরের শুরুতে অগ্নিগর্ভ ছিল উন্নাওয়ের পরিস্থিতি।

উন্নাও গণধর্ষণকাণ্ডে নয়া মোড়। বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন এক তরুণী। স্থানীয় আদালতের নির্দেশে এ বার থানায় এফআইআর দায়ের হল তাঁর বিরুদ্ধেই। তাতে বলা হয়েছে, ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেকে নাবালিকা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর মা এবং এক আত্মীয়ও ওই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। জালিয়াতির মামলা দায়ের হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধেও।

এই ধর্ষণ মামলায় মোট ১১ জন অভিযুক্ত জেলবন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে শশী সিংহ নামের এক মহিলা ও তার ছেলে শুভম সিংহ। স্ত্রী ও ছেলের হয়ে সম্প্রতি  স্থানীয় আদালতে একটি আবেদন জমা দেন শশী সিংহের স্বামী হরিপাল সিংহ। তাতে নির্যাতিতার চরিত্র নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন তিনি।

হরিপাল সিংহের দাবি, অবদেশ তিওয়ারি নামের এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অভিযোগকারিণীর। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে ওই যুবকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েও যান। তার পর থেকেই তাঁর পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে মেয়েটির পরিবার। মেয়ে ফিরে এলে শুভমের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে বলে গোঁ ধরে বসে। কিন্তু রাজি হয়নি শুভম। তাতেই প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগে মেয়েটি ও তার পরিবার। মিথ্যে অভিযোগে শুভম ও তার মায়ের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং যৌন নির্যাতন থেকে শিশু সুরক্ষা আইনে(পকসো)মামলা দায়ের করে।

নিজেকে নাবালিকা প্রমাণ করতে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের তরফে স্কুলের যে শংসাপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও ভুয়ো ছিল বলে দাবি হরিপাল সিংহের। তাঁর অভিযোগ, ওই শংসাপত্রে রায়বেরিলির প্রাথমিক শিক্ষা আধিকারিকের সই রয়েছে। সই রয়েছে মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকারও। কিন্তু ওই শংসাপত্রে সই করার কথা অস্বীকার করেছেন তাঁরা দু'জনেই। হরিপাল সিংহের আবেদনের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করতে নির্দেশ দেয় আদালত। যার পর রবিবার উন্নাওয়ের মখি থানায় নির্যাতিতা, তাঁর মা এবং এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ৪১৯ (সই নকল করে প্রতারণা), ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭ (জালিয়াতি), ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) এবং ৪৭১ (ভুয়ো নথিপত্রকে আসল বলে চালানো) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানানমখি থানার আধিকারিক দীনেশচন্দ্র মিশ্র। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং যাবতীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তিনি।

বছরের শুরুতে কাশ্মীরে মন্দিরের ভিতরে এক শিশুর ধর্ষণ নিয়ে গোটা দেশ যখন উত্তাল, সেইসময় এপ্রিল মাসে উন্নাও গণধর্ষণকাণ্ড সামনে আসে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে যান বছর ১৮-র ওই নির্যাতিতা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালের জুন মাসে তাঁকে ধর্ষণ করে শুভম সিংহ ও তার এক সঙ্গী। শুভমের মা শশী সিংহ তাঁকে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের হাতে তুলে দেয়। নিজের বাড়িতে তাঁকে ধর্ষণ করেন কুলদীপ। থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে লাভ হয়নি। উল্টে তাঁর বাবাকেই মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়। পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় পুলিশ হেফাজতে। ময়না তদন্তে তাঁর বাবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ধরা পড়লে তদন্তে নামে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।

সব কিছু খতিয়ে দেখে ধর্ষণ মামলায় কুলদীপ ও শশী সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। নির্যাতিতার বাবার খুনে কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের ভাই অতুল এবং অন্য চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। গোটা ষড়যন্ত্রে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি চার্জশিট জমা পড়ে।