বেতন লাগবে না, বিনামূল্যে পড়াতে চান এই শিক্ষক


কলকাতা: নভেম্বরেই সরকারি নিয়মমাফিক শিক্ষকতা থেকে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন কাঁথি পণ্ডিত দিবাকর বেদান্ত পঞ্চানন রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক তথা ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ী৷

কিন্তু ছাত্রদের শেখানোর ইচ্ছেটা অবসর নেয়নি৷ পাশাপাশি একেবারেই চান না তার পর শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যাক৷ তাই বিনা বেতনেই কলেজে সংস্কৃত শেখাতে চান তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ী৷

১৯৫০ সালে কাঁথিতে স্থাপিত হয়েছিল পণ্ডিত দিবাকর বেদান্ত পঞ্চানন রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়৷ এরপরে কলেজটির ভবিষ্যৎ কী? তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ছাত্ররা এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ী৷

কলেছের এক ছাত্র এবং কাঁথির বাসিন্দা কৌশিক পাল বলেন, ''আমরা কোনভাবেই চাই না যে কলেজ বন্ধ হোক৷ স্যার তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ী অবসরের পরও বিনা বেতনে আমাদের পড়িয়ে যেতে ইচ্ছুক৷ আমরা সে কথা চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকেও জানিয়েছি৷ সরকারে পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে প্রায় ৭০ বছরের পুরনো এই কলেজটি বন্ধ হওয়া থেকে বেঁচে যায়৷''

স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে তিনটি সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়৷ যার মধ্যে এখনকার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথিতে রয়েছে একটি৷ ন্যায়, বেদান্ত, সাংখ্যদর্শন এবং ব্যাকরণের মতো বিষয় পড়ানো হয় এই কলেজে৷ দীর্ঘ ৬৮ বছরে অনেক ছাত্র এখান থেকে পাশ করে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের একাধিক জায়গাতে শিক্ষকতার কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ী৷

অধ্যাপক তুষারকান্তিবাবু বলেছেন, ''আমি নভেম্বরে অবসর নিয়েছি৷ কোনও নতুন নিয়োগ হয়নি৷ এমনকি কোনও শিক্ষাকর্মীও নেই এই কলেজে৷ চারজন ছিলেন, তারা অবসর নেওয়ার পর আর নতুন নিয়োগ হয়নি৷ আমার পর এই কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে৷ এর আগেও বাকি দুটি কলেজের একই অবস্থা হয়েছে৷''

পণ্ডিত দিবাকর বেদান্ত পঞ্চানন রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রচুর বই৷ যেগুলোর মধ্যেই অনেক বই দুঃষ্প্রাপ্য৷ আর্য সমাজ পত্রিকা,সাংখ্য,ন্যায় প্রভৃতি দর্শনের উপর বই রয়েছে কাঁথি সংস্কৃত কলেজের আলমারিতে৷ তুষারকান্তিবাবুর চিন্তা, তার অবসরের পর কলেজ উঠে গেলে এই মহামূল্যবান বইগুলি আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাবে৷

ভারতের একটি জনবহুল দেশ, যেখানে পর্যাপ্ত স্কুল কলেজের অভাবে সবাই ফ্রি-তে শিক্ষার সুযোগ গ্রহন করতে পারে না৷ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বিশেষ করে যেখানে তুষারকান্তি পঞ্চ্যাধ্যায়ীর মত এক বয়স্ক শিক্ষক বিনা বেতনে পঠনপাঠনের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক সেখানে রাজ্য সরকারের এগিয়ে আসাই উচিৎ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷