মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র এবার থেকে সরাসরি যাবে পরীক্ষা ঘরে


কলকাতা: ময়নাগুড়ি স্কুলে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার জেরে এবার আরও সতর্ক হচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আগামী বছর মাধ্যমিকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট আর রাখা হবে না বলে ঠিক করেছে তারা। ট্রেজারি বা থানা থেকে সরাসরিই তা পৌঁছে দেওয়া হবে পরীক্ষার হলে। সেখানেই পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রশ্নপত্রের সেই প্যাকেট খোলা হবে। পর্ষদ সভাপতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবার প্রশ্নপত্র রাখার জন্য স্কুলভিত্তিক কোনও স্ট্রং রুম থাকছে না। পর্ষদই সরাসরি ক্লাসভিত্তিক প্রশ্নের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। শিক্ষামহলের মতে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে স্কুল, প্রধান শিক্ষক বা ভেন্যু সুপারভাইজারদের ক্ষমতা খর্ব করে নিজেরাই বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে নিচ্ছে পর্ষদ।

এতদিন, ছোট ছোট প্যাকেটে প্রশ্নপত্র দিয়ে তা একটি বড় প্যাকেটে করে বিভিন্ন 'কাস্টোডিয়ান' বা 'জিম্মাদার'-এর কাছে পাঠানো হতো। 'কাস্টোডিয়ান' বলতে থানা বা ট্রেজারি। সেখান থেকে প্রশ্নের প্যাকেটগুলি পরীক্ষা শুরুর অনেকটা আগেই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা প্রধান শিক্ষকের ঘরেই রাখা হতো। সেটিই স্ট্রং রুম হিসেবে কাজ করত। কোন ক্লাসে কত প্রশ্ন দরকার, সেখানেই তা বাছাই করে আবার প্যাকেটে পুরে ক্লাসে ক্লাসে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। তারপর নির্ধারিত সময়ে সেই প্যাকেট খুলে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নগুলি বিলি করা হতো। কিন্তু এবছর ময়নাগুড়ি স্কুলে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়। প্রধান শিক্ষকের ঘর থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে।

এবার আর সেই পরিস্থিতি যাতে না হয়, তার জন্য কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় সরকার। পর্ষদ তাই প্রধান শিক্ষকের ঘরে তৈরি সাময়িক স্ট্রং রুমের পাটই চুকিয়ে দিচ্ছে। আগেরবার প্রশ্ন ফাঁক রুখতে প্রযুক্তির সাহায্যও নিয়েছিল পর্ষদ। সময়ের আগে প্যাকেট খুললে নাকি চিপের মাধ্যমে বোর্ডের কন্ট্রোল রুমে খবর চলে আসবে- এমনই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও রোখা যায়নি এই বিপত্তি। তাই এবার আর কোনও মধ্যবর্তী ব্যবস্থাই রাখা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বছর যা নিয়ম ছিল, তাতে সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রশ্ন চলে আসত স্কুলে। কিন্তু এবার আর এত আগে তা পাঠানো হবে না। সাড়ে ১১টার মধ্যে তা স্কুলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পর্ষদ। পর্ষদের এই পদক্ষেপে একটা প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। সেটা হল, তাহলে কি পর্ষদ নিজেদের আধিকারিকদের উপরই আর ভরসা করতে পারছে না?