এ রাজ্যে বাড়ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা, বলছে সমীক্ষা


রোগের কারণ ধরা পড়েছে। বিভিন্ন ভাবে দাওয়াই দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সম্পূর্ণ রোগ নিরাময়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং রাজ্যে নাবালিকা মায়েদের ঘিরে সমস্যার জট চিন্তা বাড়াচ্ছে।

মেয়েদের স্কুলছুট রোখার কাজ চলছে রাজ্য সরকারের কয়েকটি প্রকল্পে। আন্তর্জাতিক স্তরে সুনাম কুড়িয়েছে 'কন্যাশ্রী' প্রকল্প। নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করে তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে পুলিশ থেকে শিশুর অধিকার সুরক্ষা কমিশন, সকলেই তৎপর। 

কিন্তু তার পরেও রাজ্যে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানাচ্ছে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্‌থ সার্ভের রিপোর্ট। ওই সমীক্ষার দাবি, পশ্চিমবঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা কিংবা ইতিমধ্যেই মা হওয়া ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়ের সংখ্যা সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে সমস্যাটা আরও গভীর। বাঁকু়ড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের মতো জেলার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ১৮ বছরের কম বয়সে প্রসবের ক্ষেত্রে মা ও সন্তানের নানা সমস্যা হয়। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সেই ছেলেমেয়েদের শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশ ঘটতে থাকে। তার আগে স্তন, ডিম্বাণু বা গর্ভাশয়ের মতো অঙ্গের বিকাশ ঘটে না। ফলে নাবালিকা মায়েদের গর্ভপাতের ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। নবজাতকদেরও গঠনগত ত্রুটি এবং পুষ্টির সমস্যা দেখা যায়।

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''রাজ্যে সন্তানপ্রসবের সময় মায়ের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং রক্তচাপের জটিলতা। নাবালিকা মায়েদের শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ না-হওয়ায় রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। তার জেরেই খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।'' আর এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস জানান, ১৮ বছরের আগে প্রসব করলে যে-সব শারীরিক ক্ষতি হয়, তাতে ভুগতে হয় আজীবন। জীবনযাপনের মান নেমে যায়। তার প্রভাব পড়ে মা ও সন্তান, দু'জনের উপরেই।

অকালমাতৃত্ব
    গ্রাম         শহর
• ভারত            ৫%                               ৯.২%
• পশ্চিমবঙ্গ     ২০.৬%                            ১২.৪%
জেলা শীর্ষে
• মুর্শিদাবাদ ৩১.৫%
• বাঁকুড়া ২৭.৭%
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা ২০%
• উত্তর ২৪ পরগনা ২৩.৪% (গ্রাম), ১৩.৩% (শহর)

সূত্র: ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে 
বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লাগাতার কর্মসূচি, সচেতনতা প্রকল্প সত্ত্বেও নাবালিকা মায়ের সংখ্যায় রাজ্য প্রথম সারিতে কেন? মানসিকতার পরিবর্তনের অভাবেই পরিস্থিতির বদল ঘটছে না বলে মনে করছেন নারী আন্দোলন কর্মী শাশ্বতী ঘোষ। ''বিয়ের পরে প্রসব-ক্ষমতার প্রমাণ দেওয়াই সব চেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। নাবালিকা বৌ এই পরীক্ষা দিতে বাধ্য। তাই একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় রাজ্যে নাবালিকা বিয়ের হার কিছু কমলেও নাবালিকা মায়ের সংখ্যা উদ্বেগজনক,'' ব্যাখ্যা শাশ্বতীদেবীর।

রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প নাবালিকা বিয়ে রুখতে সাহায্য করছে। বিয়ে এবং নাবালিকা মায়ের সমস্যা পারস্পরিক ভাবে যুক্ত। ''এই সামাজিক সমস্যার জট অনেক গভীরে। তাই সমস্যা মেটাতে আরও কিছু সময় লাগবে,'' বলেন শশীদেবী।