ফের হাওড়ায় বিরাট অস্ত্র কারখানার হদিশ


হাওড়া: অস্ত্র কারখানার হদিশ পাওয়া গেল হাওড়ার টিকিয়াপাড়া এলাকায়। যা ঘিরে স্বভাবতোই ছড়াল চাঞ্চল্য।

হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার গঙ্গারাম বৈরাগী লেনে অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলল। এখানে একটি ছোট্ট গলির মধ্যে লেদ কারখানা চলছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সেখানে হানা দেয়। অভিযানে প্রায় চল্লিশটি ফিনিশড আর্মস পায়। এছাড়াও প্রায় ৩০টি আনফিনিশড অবস্থায় আর্মস পুলিশ উদ্ধার করেছে।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হল মহম্মদ সোহেল আলম, মহম্মদ আনোয়ার এবং মহম্মদ নিরজ আনসারি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে এদের মধ্যে প্রথম দুই জনের বয়স ৩৮ বছর এবং অন্তিম ব্যক্তির বয়স মাত্র ১৮ বছর। ধৃত সকলেই বিহারের মুঙ্গের জেলার কোতয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা।

এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হাওড়ার নগরপাল তন্ময় রায়চৌধুরী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে ধৃত তিনজনেই বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা। তারা এই ঘরটি ভাড়া নিয়েছিল। সারাদিন দরজা বন্ধ করে এই ঘরের ভিতরে তারা অস্ত্র তৈরি করত বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান।

স্থানীয় যে লোকটির মাধ্যমে তারা এই ঘরটি ভাড়া নিয়েছিল তার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। এরা এদিন চল্লিশটি তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তাদেরকে সেই চল্লিশটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ ধরা হয়। নগরপাল আরও জানান যে সাম্প্রতিককালে এতো বড় অস্ত্র কারখানার হদিশ পাওয়া যায়নি।

কী করে পুলিশের নজরে এল এই অস্ত্র কারখানা? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিনের বন্ধ থাকা কারখানাটি খোলার পর থেকেই পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ নজরদারি শুরু করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাতেনাতে ধরার উদ্দেশ্যে ওই কারখানায় হানা দেয় হাওড়ার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, "এখানে অস্ত্র তৈরি হতো। লেদ মেশিন উদ্ধার করা হয়েছে। এখান থেকে প্রায় ৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলি আনফিনিশড অবস্থায় ছিল। তিনটি লেদ মেশিন উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও তল্লাশি চলছে।"

এলাকার মানুষ জানান তাদের ঘরের পাশে এমন অসামাজিক কাজ হতো তা তারা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি। এই ঘটনার পরে আগামী দিনে ঘর ভাড়া দিতে গিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করে তবেই ঘর ভাড়া দেওয়ার কথা ভাববেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানিয়েছেন যে ওই কারখানায় সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত একটানা কাজ হতো। এরপরে খাওয়াদাওয়ার পরে আবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারখানার দরজা বন্ধ রেখে কাজ চলত।

বছর পাঁচেক আগে হাওড়ার বাকড়া এলাকায় অস্ত্র কারখানার হদিশ মিলেছিল। সেই কারখানার সঙ্গেও বিহারের মুঙ্গেরের যোগ পাওয়া গিয়েছিল। এরপরে চলতি বছরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে একাধিক জায়গায় অত্র কারখানার হদিশ পেয়েছিল গোয়েন্দারা। গ্রেফতার করা হয় অস্ত্র কারখানার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে। সেই সকল অভিযুক্তদের সঙ্গে এদিনের ধৃতদের যোগসাজশের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।