পাকিস্তান থেকে জঙ্গিদের টাকা ঢুকছে রাজ্যে


পাকিস্তান থেকে রাজ্যের ৪৫টি অ্যাকাউন্টে জঙ্গিদের সাহায্যে ৫৪ কোটি টাকারও বেশি জমা হয়েছে। বিভিন্ন লোকের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে ওই টাকা জমা হয়েছে। এই চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করল হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার পুলিস। ধৃতদের সকলেরই বাড়ি বিহারের সিওয়ান জেলায়। তারা হাওড়া স্টেশন, দমদম ও রাজাবাজার এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। বিভিন্ন লোকজনকে কমিশনের মাধ্যমে তারা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলাত। তারপর তাদের এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর তারাই নিয়ে নিত। এরপর ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে প্রতিবারই ৫০ হাজার টাকার নীচে জমা পড়ত। সেই টাকা একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হতো। কার হাতে টাকা দেওয়া হবে, তা পাকিস্তান থেকে ওই ‌এজেন্টদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে নির্দিষ্ট কোড দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো। ওই কোড মিলিয়েই এজেন্টরা টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে তুলে দিত। এভাবেই গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় ছিল ওই চক্র। কিছুদিন আগে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তারপর এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস এই আন্তজার্তিক চক্রের হদিশ পায়।
হাওড়ার পুলিস কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, এই চক্রের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। গোলাবাড়ি থানা ও হাওড়া সিটি পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

সিটি পুলিসের এক কর্তা বলেছেন, সোমবার ধৃত সাতজনকে আদালতে তোলা হয়েছিল। তাদের জেরা করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এদের জাল পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকে কম পরিমাণে (৫০ হাজার টাকার কম) টাকা জমা করা হতো। এই টাকা মূলত হাওড়া, দমদম, টিটাগড় ও রাজাবাজারের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। এই চক্রের আরও কয়েকজনের নাম জানা গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এক ব্যক্তির ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার একটি চেক জমা পড়ে। সেই চেকের টাকা অন্য একটি অ্যাকাউন্টে জমাও হয়ে যায়। কিন্তু, যাঁর চেক, তাঁর ফোনে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে বলে মেসেজ যেতেই তিনি আঁতকে ওঠেন। তাঁর বাড়িও বিহারে। তিনি সেখানকার স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করে জানান, ওই চেক তিনি দেননি। ব্যাঙ্ক তদন্তে নেমে দেখে, ওই টাকা অন্য একজনের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা ওই অ্যাকাউন্টটিও 'ব্লক' করে দেয়। কিন্তু, ততক্ষণে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপরই গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করে ব্যাঙ্ক। 
পুলিস তদন্তে নেমে দেখে, ওই ব্যক্তির চেক 'ক্লোন' করে এই জালিয়াতি হয়েছে। এরপর যে ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছিল, তাকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। সে জানায়, কমিশনের বিনিময়ে তার নামে অন্য একজন অ্যাকাউন্ট খুলেছে। পুলিস তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি চালায় এবং তাকেও গ্রেপ্তার করে। এরপর একে একে বাকিদের গ্রেপ্তার করে।

পুলিসের জেরার মুখে ধৃতরা জানিয়েছে, বিভিন্ন লোককে দিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলানোর দায়িত্ব ছিল তাদের। এমনকী, সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলে এটিএম কার্ড দিয়ে তা তুলে নেওয়া হতো। তারপর নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে সেই টাকা তুলে দেওয়া হতো। সেই 'অজ্ঞাতপরিচয়' ব্যক্তির সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ আছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে। পুলিস আরও জানতে পারে, মাত্র কয়েকমাস ধরে নতুন এই পদ্ধতিতে টাকা আসতে শুরু করেছে। কিন্তু, শুধুই জঙ্গিদের টাকা সরবরাহ, নাকি অন্য কোথাও পাচারের জন্য এই রাজ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। পুলিসের এক শীর্ষকর্তা বলেছেন, এই চক্রের মূল পাণ্ডাকে গ্রেপ্তার করা গেলেই বড় সাফল্য আসবে।