৩৪ বছর পরেও ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার জীবিতরা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি


ভোপাল: রাজীব গান্ধীর আমলে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটলেও তার ৩৪ বছর পরেও মোদী জমানায় সেই দুর্ঘটনায় জীবিতরা আজও এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷ তাঁরা এখনও ঠিক মতো পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ তাদের নতুন সমস্যা ডুপন্ট এবং ডাউ কেমিক্যালস কোম্পানির সংযুক্তিকরণ ঘিরে৷ একটি সর্ব ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম তেমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

জীবিত থাকা মানুষগুলির সংগঠনের মতানুসারে, এই দুই সংস্থার সংযুক্তিকরণ হলে ইউনিয়ন কার্বাইটের আইনত কোনও অস্তিত্ব থাকবে না৷ তাহলে এদের দাবি মতো পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পেতে হয়রানি বাড়বে৷ বিশ্বের অন্যতম জঘন্যতম বিপর্যয় যার জেরে সেই ১৯৮৪ সালের ২-৩ ডিসেম্বরে শহরের ইউনিয়ান কার্বাইডের কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইট কেড়ে নিয়েছিল ১৫,০০০ মানুষের প্রাণ৷

সংগঠনের চায় কেন্দ্রীয় সরকার যেন ব্যবস্থা নেয় যাতে এই ডাও কেমিক্যালস ভোপালের মানুষদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের দায় এড়িয়ে না যেতে পারে ৷ এদের পাঁচটি সংগঠন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই ঘটনা জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দিয়েছে যদিও তারপরে এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷

এই সংগঠনগুলির অন্যতম ভোপাল গ্যাস পেডিড মহিলা স্টেশনারি কর্মচারি সংঘের সভাপতি রশিদা বে জানিয়েছেন, পিএমও এখনও কোনও পদক্ষেপই করেনি যাতে ডুপন্ট এবং ডাউ কেমিক্যাল ত্রিখ্ডনের মাধ্যমে ইউনিয়ন কার্বাইড মুছে দেওয়ার প্রক্তিয়া যা দুই মাস পরেই শুরু হবে। তিনি জানান গত আট মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দেওয়া তাদের চিঠিটা ঝুলেই রয়েছে৷

তাঁর যুক্তি হল, আইনগত নীতি অনুসারে কোনও ফৌজদারি দায় কখনও এক সংস্থা অন্য কোনও সংস্থার ঘাড়ে চাপাতে পারে না৷ ফলে একবার যদি ইউনিয়ন কার্বাইড মুছে যায় তাহলে ভারতের আদালত আর সক্ষম হবে না ঝুলে থাকা ফৌজদারি অভিযোগগুলি বলবৎ করার৷

ভোপাল গ্রুপ ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশনের আহ্বায়ক রচনা ধিংগরা জানান,২০১০ সালে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন অতিরিক্ত ১.২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে৷ কিন্তু গত আট বছরে কংগ্রেস এবং বিজেপি সরকার কেউই কোনও আবেদন জানাননি এই মামলার শুনানি তাড়াতাড়ি করার জন্য এবং মামলা করার পর এই প্রতিকারমূলক আবেদন এক ইঞ্চিও এগোয়নি৷

২০১০ সালে ক্ষতিপূরণ বাড়াতে সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকারমূলক আবেদন দাখিল করার পর বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪৯৪৪জন নানা রকম অসুখে গুরুতর ভাবে অসুস্থ রয়েছেন৷ তবে জীবিতদের নিয়ে গঠিত সংগঠনের দাবি, মৃত্যু এবং গুরুতর অসুস্থের সংখ্যা আরও বেশি৷ এই বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্ত আরও দুটি প্রজন্মকে ধরলে দাড়াচ্ছে ৫,৭০,০০০ জন৷

অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যাপারে ২০১০ সালে ভোপালের মুখ্য দায়রা আদালত ইউনিয়ন কার্বাইডের চেয়ারম্যান কেশব মহিন্দ্র সহ সাতজনকে দুবছরের জেলের নির্দেশ দিলেও তাঁরা জামিন পান এবং ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন ভোপালের শেষন কোর্টে যা এখনও ঝুলে রয়েছে৷ তবে আরও বেশি শাস্তি দাবি করে সিবিআই আদালতে আবেদন করেছিল৷