মিউটেশন এবার থেকে হবে অনলাইনে, সিদ্ধান্ত রাজ্যের


কলকাতা: জমির মিউটেশন সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের ভূমি ও ভূমি-রাজস্বমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর পরিচালনায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে অনলাইনে রাজ্যজুড়ে জমির মিউটেশন হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কষ্ট করে ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের (বিএলআরও) অফিসে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে না। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এর ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। তাঁর দাবি, বছরে গড়ে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ জমির মিউটেশন সংক্রান্ত কাজ করান। সেক্ষেত্রে এখন থেকে রেজিস্ট্রির সময় নথিভূক্ত হওয়া জমির ক্রেতা-বিক্রেতার যেসব তথ্য সরকারি খাতার উঠে যায়, তার ভিত্তিতেই কম্পিউটারের এক ক্লিকে মিউটেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

ভূমি দপ্তর সূত্রের দাবি, মিউটেশনের কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারি স্তরে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ বহুদিন ধরেই উঠছে। পাশাপাশি এই কাজ করিয়ে দেওয়ার নাম করে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করা হতো বলেও বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। বিষয়টি কানে যেতেই মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন। তারই ফলশ্রুতিতে অনলাইন মিউটেশন ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে গোটা রাজ্যে। প্রসঙ্গত, এর আগে কৃষকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে কৃষি জমির খাজনা মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, কৃষকদের জন্য চাষযোগ্য জমির মিউটেশন ফ্রি করে দিয়েছি। এবার বাস্তু জমির মিউটেশন প্রক্রিয়া সরলীকরণ করা হল।
অন্যদিকে, এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে একাধিক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এ রাজ্যে চর্মশিল্পে বিনিয়োগে একাধিক সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ ধরনের হাজারটি সংস্থা এ রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চেয়ে প্রয়োজনীয় অনুমোদন চেয়েছে বলেও জানান মমতা। তাঁদের জায়গা করে দিতে ৩৫০ একর জমি প্রয়োজন। তা খোঁজার কাজ চলছে। সেই এলাকা ঘিরে জল, বিদ্যুৎ সহ একাধিক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ রাজ্য সরকার শুরু করবে বলেও জানান তিনি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে প্রায় তিন লক্ষ ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, এই মুহূর্তে চর্মশিল্পে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ছেলেমেয়ে কাজ করছেন।

একইসঙ্গে এদিনই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফ্লিপকার্টের প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়া হয়। নদীয়ার কল্যাণীতে লজিস্টিক হাব গড়ে তুলতে চলেছে অনলাইন কেনাবেচার এই সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ফ্লিপকার্ট কল্যাণীতে ৯৯১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে। এই প্রকল্পটি চালু হলে রাজ্যের প্রায় ১০ হাজারের বেশি বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও খড়্গপুরে বড় মাপের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে সায় দিল মন্ত্রিসভা। অপ্রচলিত শক্তির বিকাশে বহুদিন থেকেই উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তাই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বড় আর্থিক ভর্তুকি ঘোষণা করেছে নবান্ন। এবার বড় ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, খড়্গপুরে ১০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হবে।

এদিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতীর্থদের আসন্ন বড়দিন এবং নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে রাজ্যবাসীকে হাসি মুখে 'মেরি ক্রিসমাস' বার্তা দেন তিনি। পাশাপাশি উৎসব-আনন্দের এই মরশুমে প্রশাসনকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেন মমতা। কেবল কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে পর্যাপ্ত পুলিসি নজরদারি, যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শও দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।