‘আনন্দ’ সংলাপে মৃত্যু বরণ পাক গুলিতে নিহত শহীদের


গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে শরীর। জওয়ানের সুঠাম চেহারা মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু দেশ মাতৃকা অন্ত প্রাণ সেনা যুবক এসবে ভয় পায় না। মৃত্যু বুকে জড়িয়ে ক্যাপ্টেন কুণ্ডুর মনে মনে যেন রাজেশ খান্নার সেই বিখ্যাত ডায়লগটিই ঘোরাফেরা করছিল 'জিন্দেগী লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে'।

মাইলস্টোন ডায়লগ। প্রত্যেকটি হিট সংলাপ লেখায় একজন লেখকের যেমন কৃতিত্ব থাকে তেমনই কৃতিত্ব থাকে যিনি পর্দায় রয়েছেন তিনি সেই কথাটি কেমন ভাবে বলছেন সেটার উপরেও অর্থাৎ সোজা কথায় 'ডায়লগ ডেলিভারি'। অসাধারণ সংলাপেও ম্যাড়ম্যাড়ে পরিবেশনা মাটি করতে পারে লেখকের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে। কিন্তু তিনি তো বলিউডের 'হিরা পান্না, রাজেশ খান্না'।

এমন চমকে দেওয়া লেখার তিনি অসম্মান করতে অক্ষম। আনন্দ ছবির লেখনিতে পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় থেকে গুলজার প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে। সেটির সঠিক পরিবেশোনার দায়িত্ব ছিল অভিজ্ঞ রাজেশ খান্নার উপর। আবেগঘন গলায় রাজেশ এমন ভাবে ওই 'জিন্দেগী লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে' কথাটি বললেন যে, হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সেরা সংলাপ গুলিরমধ্যে সেরার তকমা পেয়ে যায়।

সংলাপের এমন ক্ষমতা যা অনুপ্রেরনা জাগায় সীমান্তে লড়াই করা জওয়ানকেও। তেমন কিছুরই প্রমাণ মিলেছিল সেনা জওয়ান ক্যাপ্টেন কুণ্ডুর মৃত্যুর পর। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে আজও পরিস্কার সেই লাইনগুলি ''জিন্দেগী লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে'।

ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ফের পাক গোলা বর্ষণ। হামলায় মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনাদের। এ বার। নিহতদের মধ্যেই ছিলেন রয়েছেন ক্যাপ্টেন কে কে বা ক্যাপ্টেন কুণ্ডু এবং আরও তিন জওয়ান।

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই দিন বিকেল বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ রাজৌরির ভীমবেড় গলি সেক্টরে গুলিগোলা ছুটে আসে পাক সীমানা থেকে। জবাব দেয় ভারতীয় সেনাও। দুই পক্ষের গুলি-বিনিময়ে ভারতীয় সেনার দুই রাইফেলম্যান রাম অবতার ও শুভম সিংহ এবং হাবিলদার রোশন লাল প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন ক্যাপ্টেন কপিল কুণ্ডু। পরে তিনি মারা যান।

মাত্র ২২ বছর ৩৫৭ দিনেই শেষ হয় জওয়ানের জীবন। ছয় দিন পরেই তেইশতম জন্মদিন ছিল ক্যাপ্টেনের। তা আর পালন করা হয়নি। কিন্তু এমন মৃত্যুতেই যেন খুশি ছিল শহীদের নস্মর দেহ, মন, শরীর। তাঁর রক্তের প্রত্যেক বিন্দুতে ছড়িয়ে গিয়েছিল একটাই কথা, রাজেশ খান্নার 'জিন্দেগী লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে' সংলাপ।

১৫ জম্মু-কাশ্মীর লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের নিহত ক্যাপ্টেন কপিল কুণ্ডুর বাড়ি গুরুগ্রামে। আজ না আছেন রাজেশ না আছেন ক্যাপ্টেন। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বরের এমন দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা। সংলাপ বোঝায়, জীবন সত্যিই লম্বা না হলেও চলবে, কিন্তু বড় হওয়া চাই।