অশোকনগরের নার্সিংহোমে অবৈধভাবে চলত গর্ভপাত


‌হাবড়া: শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার ঘটনায় নাম উঠে আসা উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের নার্সিংহোমটিতে হাতুড়েদের ভরসায় মূলত অবৈধভাবে গর্ভপাত, সন্তান প্রসব করানো হত। পরে মোটা টাকার বিনিময়ে সেইসব নবজাতকদের বিক্রি করে দেওয়া হত। শিশু পাচারচক্রে যুক্ত রয়েছে এমন আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছে পুলিস। এর পাশাপাশি, যে শিশুটি পাচার হয়েও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেছে তার আসল মা–কে শনাক্ত করেছে পুলিস।

১১ দিনের এক শিশুকে নিজেদের সন্তান বলে দাবি করে হাবড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় এক দম্পতি। আর তারপরেই প্রকাশ্যে আসে অশোকনগরের একটি নার্সিংহোমের শিশু পাচার চক্রের কথা। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই দম্পতি, অভিযুক্ত নার্সিংহোমের মালকিন রঞ্জিতা রায়, ম্যানেজার রণজিৎ দে এবং হাতুড়ে চিকিৎসক মনোজ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। রণজিৎ এবং মনোজকে আদালতে তোলার পর বিচারকের নির্দেশে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে, নার্সিংহোমের বর্তমান মালিক রঞ্জিতা রায়ের স্বামী বছর তিনেক আগে মারা গেছেন। তিনিও একজন হাতুড়ে ছিলেন। সেই সময় থেকেই ওই নার্সিংহোমে অবৈধ গর্ভপাত, সন্তান প্রসব করানো হত। এখন এই কাজ মূলত চালায় হাতুড়ে মনোজ। তার মতো আরও কয়েকজন হাতুড়ে এই নার্সিংহোমে এই ধরনের অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত। নার্সিংহোমের ম্যানেজার রণজিৎ বিধবা মহিলা, অবিবাহিত মহিলা, যঁারা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তঁাদের জোগাড় করে এই নার্সিংহোমে নিয়ে আসত। এরপর সেখানে প্রথমে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করা হত। আর যে মহিলাদের গর্ভপাত করানোর সময় পার হয়ে যেত, তঁাদের সন্তান প্রসব করানো হত। আর এই কাজে যুক্ত ছিল মনোজ বিশ্বাসের মতো বেশ কয়েকজন হাতুড়ে। এই সদ্যোজাতদের মোটা টাকার বিনিময়ে বাইরে পাচার করে দেওয়া হত। সেসব খরিদ্দারও‌ জোগাড় করত রণজিৎ। বেশ কয়েক বছর ধরে অশোকনগরের ওই নার্সিংহোমে এই ধরনের অবৈধ কাজ চলে আসছে বলে তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে। এই কারণে আগে একবার নার্সিংহোমে ভাঙচুরও চালানো হয়। পুলিস আরও জানতে পেরেছে, বছর তিনেক ধরে কোনওরকম লাইসেন্স ছাড়াই এই নার্সিংহোমের কাজকর্ম চলছে। এ ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ হাতে নিতে পুলিস জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর, পুরসভা, দমকল বিভাগে চিঠি পাঠাচ্ছে। নার্সিংহোমে হাতুড়ের কাজ করে অশোকনগরের এজি কলোনি এলাকায় তিনতলা বিশাল বাড়ি তৈরি করেছে মনোজ। এলাকায় চেম্বার খুলে বসলেও সে যে একজন হাতুড়ে, স্থানীয় মানুষ এটি জেনে যাওয়ায় তার চেম্বারে তেমন রোগী হয় না। শিশু পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তার বাড়ি আপাতত তালাবন্ধ।