কল সেন্টার প্রতারণা: ইন্দো-অ্যামেরিকা-ক্যানাডা যৌথ অপারেশনে গ্রেপ্তার ১২৬


নয়ডা : কল সেন্টারের আড়ালে প্রতারণা চক্র চালানোর অভিযোগে শুক্রবার নয়ডা থেকে ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চক্রের মূল পান্ডাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। অনুমান, এই চক্রের পিছনে আন্তর্জাতিক হাত রয়েছে। নয়ডার কমার্শিয়াল হাব সেক্টর ৬৩-তে ঝাঁ চকচকে অফিস। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে কল সেন্টার। দেখলে সন্দেহ হওয়ার মত কিছু ছিল না। কিন্তু, তার আড়ালেই চলত প্রতারণা চক্র। সেখানেই বসে টার্গেট করা হত বিদেশিদের। অভিযোগ, মূল টার্গেট ছিলেন অ্যামেরিকানরা। অ্যামেরিকায় বসবাসের জন্য প্রত্যেককে একটি সোশাল সিকিউরিটি নম্বর দেওয়া হয়। আর সেটাকেই নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত প্রতারণা চক্রের পান্ডারা। অ্যামেরিকার বাসিন্দাদের বলা হত, তাঁদের সোশাল সিকিউরিটি নম্বর চুরি হয়ে গেছে। টাকা না দিলে FBI তাঁদের গ্রেপ্তার করবে। সেই ভয় দেখিয়ে তাঁদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিত প্রতারকরা। অ্যামেরিকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রতারণা চক্রের টার্গেট ছিলেন কানাডার বাসিন্দারা। তাদের ঠকিয়ে ৩,৫০০ ডলার তুলেছিল ধৃতরা।

কিন্তু, কী করে সামনে এল এত বড় জালিয়াতি চক্র?
উত্তরটা জানতে ফিরে যেতে হবে চলতি বছরের জুলাইয়ে। যখন ভারতে আসেন FBI ও কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের একদল আধিকারিক। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁরা নয়ডার পুলিশ প্রধানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তারপর জুলাই থেকে নয়ডার কলসেন্টারগুলিতে একাধিক অভিযান চালায় পুলিশ। সিনিয়র পুলিশ অফিসার অজয় পাল শর্মা বলেন, "চলতি বছরের ২০ জুলাই থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালিয়ে এরকম ২৫ টি কলসেন্টারের খোঁজ পাওয়া যায়। প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৪০০-র বেশি কম্পিউটার।"

শুধু একভাবে নয়, নিয়মিত নিত্যনতুন পদ্ধতি বের করত প্রতারকরা। ২২ নভেম্বর রাতে নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডায় কলসেন্টারের আড়ালে প্রতারণা চক্র চালানোর অভিযোগে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অজয় পাল শর্মা বলেন, "কল সেন্টারগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কিন্তু, সেগুলি একইভাবে কাজ করত। অ্যামেরিকা, কানাডার সহ একাধিক দেশের কম্পিউটারে তারা ম্যালওয়ার পাঠাত। তারপর মাইক্রোসফট, অ্যাপেলের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা।" প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকজন। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের ইংরেজি বাচনভঙ্গি ভালো হওয়ায় তাদেরকে টেলি কলার হিসেবে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হত। তাই তাদের প্রতারণা চক্রে ব্যবহার করা হত।

কিন্তু, বিদেশিদেরই কেন বেছে নিত প্রতারকরা? এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "যে টাকা দাবি করা হত তা অ্যামেরিকা ও কানাডার বাসিন্দারা তুলনায় কম বলে বিবেচনা করতেন। তাই তাঁদের পুলিশে দ্বারস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল।" অজয় পাল শর্মা বলেন, "বিদেশ থেকে ভারতে কীভাবে অর্থ আনা হত তা খতিয়ে দেখছি আমরা। আমরা বেশকিছু তথ্যসূত্র পেয়েছি। বিদেশের পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা তদন্ত করছি। ধৃতদের বিরুদ্ধে গ্যাংস্টার অ্যাক্ট ও ন্যাশ্যানাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় মামলা করার বিষয়ে নিশ্চিত করব আমরা। কারণ তারা শুধু অপরাধী নয় তারা আন্তর্জাতিকস্তরে দেশের সম্মানও নষ্ট করেছে।"