খড়দহে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু বাবার, মেয়ের দেহ রানাঘাট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেল ইঞ্জিন


ছ' মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে যাওয়ার সময় খড়দহ স্টেশনের মুখে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। আর মেয়ের দেহ ট্রেনের ইঞ্জিনের তলায় আটকে গিয়ে রানাঘাট পর্যন্ত যাওয়ার পর উদ্ধার হল। দুর্ঘটনার পর লাইনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ ওই ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকে। তার উপর দিয়ে একের পর এক ট্রেন চলে যায়। সোমবার সকালে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল খড়দহ স্টেশন চত্বর।

জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম বিশ্বরূপ দে (৪০)। তাঁর মেয়ের নাম ধৃতিস্মিতা দে। তাঁদের বাড়ি খড়দহের রহড়া মন্দিরপাড়া এলাকায়। শিয়ালদহের রেলপুলিস সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, লাইন পার হতে গিয়ে নিছক দুর্ঘটনা, নাকি আত্মহত্যা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পরই চালকের জানানো উচিত ছিল। সেটা করা হয়নি। পরে ট্রেনের চালক খবর দেওয়ার পর জিআরপি গিয়ে দেহ উদ্ধার করেছে।

এদিন ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। খড়দহ স্টেশনে ঢোকার মুখে মেয়েকে কোলে নিয়ে বিশ্বরূপবাবু লাইন পেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় আপ গ্যালপিং লালগোলা প্যাসেঞ্জার কৃষ্ণনগরের দিকে যাচ্ছিল। খড়দহ স্টেশনে স্টপ নেই বলে ট্রেনটি বেশ গতিতেই যাচ্ছিল। ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। কোলে থাকা ছ'মাসের মেয়ে ছিটকে পড়লেও ইঞ্জিনের নীচে কাউ ক্যাচারে আটকে যায়। ওই অবস্থায় ট্রেনটি প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে রানাঘাট পর্যন্ত যায়।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বরূপবাবু হাওড়ার একটি সংস্থায় কাজ করতেন। এছাড়া বাড়িতে টিউশন করতেন। স্ত্রী চন্দনা দে রায় পাতুলিয়াতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এদিন তিনি স্কুলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। একমাত্র কন্যাকে নিয়ে বিশ্বরূপবাবু খড়দহ স্টেশনের কাছে দিদির বাড়িতে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু, দুর্ঘটনার পর লাইনের মাঝে তাঁর দেহ বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকে। তার উপর দিয়ে একের পর এক ট্রেনও চলে যায়। তাতে রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

রেলপুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর কাছ থেকে ফোন নম্বর পেয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখনও ছ'মাসের বাচ্চাটি সম্পর্কে কেউ কিছু জানতেন না। পরিবারের লোকজন এসে বিশ্বরূপবাবুকে চিহ্নিত করার পর পর তাঁরা মেয়ের কথা জানতে চান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আপ লালগোলা প্যাসেঞ্জারে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে রানাঘাট জিআরপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন বেলা সাড়ে ১২টা বাজে। ট্রেন রানাঘাট স্টেশনে ঢুকতেই ট্রেনের নীচে সব কামরার নীচে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ইঞ্জিনের কাউ ক্যাচারে আটকে থাকা মৃত শিশুকন্যার থেঁতলানো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।