'আমি এই হামলার টার্গেট ছিলাম', আর কী বললেন জয়নগরের বিধায়ক


চোখে মুখে আতঙ্ক। বুঝেই উঠতে পারছিলেন না কীভাবে ঘটে গেল এই ঘটনা। তাঁর উপরে এমন প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পেট্রোল পাম্পে গেলে গুলিতে ঝাঁঝরা তাঁর দেহটা সেখান থেক বের হত তা ভেবেই শিউড়ে উঠছেন।

প্রায়ই জয়নগরের এই পেট্রোল পাম্প থেকে বিশ্বনাথ দাস তাঁর কালো স্করপিও গাড়িতে তেল ভরাতেন। তেল ভরানোর সুযোগে তিনি পেট্রোল পাম্পের সামনে থাকা চা-এর দোকানে চাও পান করতেন। বৃহস্পতিবার এই রুটিনটার একটু বদল ঘটে যায়। এদিন সকাল থেকেই জয়নগরের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের কর্মসূচি করে শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।

বিশ্বনাথ দাস নিজেই জানিয়েছেন যে, সকালে তিনি জয়নগরের এক নম্বর ব্লকে কৃষি মেলার কর্মসূচি-তে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২ নম্বর ব্লকে একটি বিডিও-র সঙ্গে একটি বৈঠক করেন তিনি। এরপর জামতলায় একটি প্রশাসনিক কাজ সারেন। সেখান থেকে যান বকুলতলা থানায়। সেখানে দেহ বহনের একটি গাড়ি নিয়ে কথা বলেন থানার আধিকারিকদের সঙ্গে। এছাড়াও এই এলাকায় একটি মর্গ তৈরির ভাবনা চলছে। তা নিয়েও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয় বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের।

এরপর বিশ্বনাথ তাঁর কালো স্করপিও-তে চেপে রওনা দিয়েছিলেন জয়নগরের বহরু পার্টি অফিসের উদ্দেশে। রোজই কাজ সেরে এই বহরু পার্টি অফিসে তিনি ঢু মারেন। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে পেট্রোল পাম্প হয় বাড়ি ফেরাটাই তাঁর রুটিন। এদিন বহরু পার্টি অফিসে ঢুকেই গাড়িটিকতে সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পেট্রোল পাম্পে তেল ভরাতে। গাড়ির সামনের আসনে চালকের সঙ্গেই বসে ছিলেন সইফুদ্দিন খান। জয়হিন্দ বাহিনীর ব্লক সভাপতি সইফুদ্দিন। তিনি ও এদিন বিশ্বনাথের সঙ্গে দিনভর ছিলেন। পেট্রোল পাম্পের সামনে চা-এর দোকানে সইফুদ্দিন-কে যেতে হত। তাই তিনি গাড়ি থেকে নামেনি। কিন্তু, এই গাড়িতে বসে থাকাটা যে তাঁর কাল হবে তা জানলে হয়তো তিনি আর যেতেন না।
বিশ্বনাথ দাস জানিয়েছন, শরীরটা এত ক্লান্ত ছিল যে পেট্রোল পাম্পে-র সামনে চা-এর দোকানে যেতে আর মন চায়নি। ভেবেছিলেন বরহু পার্টি অফিসে থেকেই তিনি গাড়ি করে বাড়ি ফিরবেন।

তাঁর দিনভর-এর গতিবিধি-র খবর যে দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল তা মানছেন বিশ্বনাথ। রোজ কোথায় কোথায় তাঁর যাওয়াটা বাধা সে তথ্য দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল। বিশ্বনাথ দাস জানিয়েছেন, এই হামলার নিশানা তিনি ছিলেন। কিন্তু বরাত জোরে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তবে এই ঘটনার পিছনে কারা তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্ত করছে। এই তদন্ত শেষ হলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

ঘটনার পরই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীকেও ফোন করেছিলেন বিশ্বনাথ। কিন্তু, শুভাশিস ফোন কেটে দেন বলে জানান বিশ্বনাথ। জেলা সভাপতি ব্যস্ত আছেন ভেবে তিনি আর ফোন করেননি বলেই জানিয়েছেন বিশ্বনাথ।