জলে-জঙ্গলে-পাহাড়ে শত্রুর উপর চরম আঘাত হানতে তৈরি হচ্ছে বিশেষ বাহিনী


সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জন্য গোপনে বিশেষ বাহিনী গড়ছে ভারতীয় সেনা। এটির আপাতত পোশাকি নাম, স্পেশাল স্ট্রাইক গ্রুপ। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কমান্ডোদের নিয়ে এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বাহিনী গড়ার কাজ চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা ভারতীয় সেনাবাহিনী সরকারিভাবে কিছু না জানালেও মঙ্গলবার বিভিন্ন বেসরকারি সংবাদমাধ্যম এবং খবরের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, গত তিন-চার বছরে মায়ানমার, ভুটান ও পাকিস্তান সীমান্তে বিভিন্ন সময় ছোট-বড় একাধিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দরকার পড়েছে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির মাজা ভেঙে দিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চালানোর সুফলও হাতেনাতে পেয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও হামলা অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে দরকার পড়লেই আগামী দিনেও যে কোনও মুহূর্তে এই চকিত হামলা চালাতে হলে সবচেয়ে আগে দরকার একটি 'কুইক রেসপন্স সম্মিলিত কমান্ডো বাহিনী'। কারণ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরিকল্পনার সময় শেষ মুহূর্তে এই বাহিনী তৈরি করা হয় প্যারা কমান্ডোদের দিয়ে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রক এবার আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে আটঘাট বেঁধে তৈরি হচ্ছে।

সরকার মনে করছে এমন বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন আছে। তাই নতুন কমান্ডো গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে বায়ুসেনা, নৌসেনা এবং স্থলসেনার মধ্য থেকে বাছাই করে। এখানে তাঁদেরই রাখা হবে যাঁদের মার্কিন নৌবাহিনীর (ইউএস মেরিনস কমান্ডো) সমতুল্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। অর্থাৎ যাঁরা জঙ্গল, পাহাড়-সহ দুর্গম জায়গায় গিয়ে আক্রমণ করতে সমর্থ। কোনও খাবার, জল ছাড়া টানা তিনদিন জেগে থেকে যুদ্ধ করতে বা আত্মগোপন করে থাকতে পারবেন। এই পৃথক দলকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সদর দপ্তর থেকে সরাসরি নেতৃত্ব দেবেন ও নিয়ন্ত্রণ করবেন স্বয়ং সেনাপ্রধান। দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এই কমান্ডো বাহিনীকে। এক, পরিকল্পনা, দুই, আঘাত হানতে পারা। প্রথম দলে ৯৬ জন সদস্য রয়েছেন। আর ১২৪ জন রয়েছেন যাঁরা সরাসরি শত্রুপক্ষের ভূখণ্ডে ঢুকে আঘাত হানবে। এই গোটা পরিকল্পনাটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে খবর।  পাকিস্তান যেভাবে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ভারতে আঘাত হানছে তা প্রতিরোধ করতেই এই বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। এটার জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দও করা হচ্ছে। যুদ্ধ করার পারদর্শিতা থাকার পাশাপাশি এই বাহিনী হবে বিশেষভাবে যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মানচিত্র বুঝতে সক্ষম। এঁরা স্থানীয় এলাকার সম্পর্কে তথ্য নিয়ে এগোতে দক্ষ।‌‌

এদিকে, সীমান্তে শত্রু সেনা বা জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাকে সুবিধে দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি আনলেন কানপুর আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁদের আবিষ্কৃত মেটামেটিরিয়াল ধাতুটি থার্মাল ইমেজার ও রেডারের নজরদারি আড়াল করতে পারে। ফলে এই ধাতুটির তৈরি জ্যাকেট, পোশাক পরে ভারতীয় সেনারা দিনে বা রাতে অভিযান চালালে কেউ তাঁদের দেখতে পাবেন না। সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, কোনও যুদ্ধবিমানকে এই ধাতুর চাদরে ঢেকে দিলে সেগুলির গতিবিধি কোনওভাবেই রেডার বা অন্য প্রযুক্তিতে ধরা পড়বে না। ফলে অদৃশ্য থেকেই ভারতীয় সেনা ও ট্যাঙ্কগুলি শত্রুর উপর হামলা চালাতে পারবে। আসলে মেটামেটিরিয়াল বিদ্যুৎ বা চৌম্বকীয় তরঙ্গে হেরফের ঘটাতে বা সেটিকে শোষণ করে নিতে সক্ষম। এর ফলে হিট রেডিয়েশন ও শব্দ তরঙ্গকে কাজ করতে দেবে না এই ধাতু। এই ধরনের মেটামেটিরিয়াল তৈরি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওই মেটামেটিরিয়ালটি অনেকটাই ভারী। তাই এর কর্মক্ষমতা অনেকটাই সীমিত। সেই তুলনায় কানপুর আইআইটির এই মেটামেটিরিয়ালটি অনেকটাই হালকা হবে। ফলে এক্ষেত্রে ভারত সহজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলতে পারবে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর সময় শত্রুপক্ষকে দুর্দান্তভাবে ধোঁকা দিতে পারবে কানপুর আইআইটি'র গবেষকদের এই অতিমানবিক আবিষ্কার।