ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির নামে দেশজুড়ে ২ হাজার কোটি টাকার প্রতারণা


কলকাতা: মেডিক্যাল­ এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করার অভিযোগে এ বছরেরই মাঝামাঝি সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল বিধাননগর পুলিস। তখনই জানা যায়, এই চক্রের জাল শুধু এ'রাজ্যে নয়। ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ভিন রাজ্যেও। তদন্তে নেমে ভিন রাজ্য থেকেও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পরে গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পিএমএলএ অ্যাক্টে (বেআইনিভাবে আর্থিক লেনদেন করা) এই মামলার তদন্ত শুরু করেছিল। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশালের নগর দায়রা আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ওই তদন্তকারী সংস্থা। সেখানেই জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত সংস্থা পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় দু'হাজার কোটি টাকা তুলেছিল গত কয়েক বছরে।

ইডি'র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, এই মামলায় এদিন চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, যে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তবে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, চলছে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে এই মামলাতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে বলেও এদিন ইডি আদালতকে জানিয়েছে।

তদন্তে জানা গিয়েছে, কলকাতা ছাড়াও, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার এবং রাজস্থানেও এই সংস্থার অফিস ছিল। সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক এজেন্ট নিয়োগ করে জয়েন্টে সুযোগ পাননি, অথচ আর্থিকভাবে সবল— এরকম পড়ুয়াদের খোঁজ করা হতো। এজেন্টরা তেমন পড়ুয়াদের সন্ধান দিলে, সংস্থার আধিকারিকরা মেডিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তারপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা একাধিক মেডিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। তবে সেই কলেজগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার শুধু কাগজে-কলেমেই ছিল। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা মোটামুটি নিশ্চিত, প্রতারণা করে অর্থ জোগাড় করতেই অভিযুক্ত সংস্থাটি খোলা হয়েছিল। তাই চার্জশিটে যে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ষড়যন্ত্র এবং ৩/৪ পিএমএলএ আইনে (টাকা পাচার) মামলা রুজু করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা যাচ্ছে, এক একজন পড়ুয়াদের থেকে প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ করে টাকা তোলা হয়েছিল। যার মধ্যে খুব সামান্য টাকা প্রথমে কয়েকটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হত পড়ুয়াদের। তারপরে বাকি টাকার অধিকাংশটাই নগদে নেওয়া হত। অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকাও খুব শীঘ্রই একাধিক বেনামী কোম্পানির অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছিল। পরে সেই টাকা এবং নগদে নেওয়া টাকা আবার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। মূলত বিভিন্নরকম সম্পত্তি কেনা হয়েছিল এই টাকা দিয়ে।

একাধিক রাজ্যে অভিযুক্তদের নামে জমি, দামি বাড়ি-ফ্ল্যাটেরও হদিশ পেয়েছেন ইডি'র তদন্তকারীরা। সূত্রের আরও দাবি, এই টাকা কোনওভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এছাড়াও এই ষড়যন্ত্রে পুরোপুরি যুক্ত থাকার অভিযোগে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। সেরকমই যে সমস্ত মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা হয়েছিল, তাদের কেউ এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল কি না, সেটা এখন খতিয়ে দেখছে ইডি।