সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকার কয়েন সরিয়ে গ্রেপ্তার ব্যাংক আধিকারিক


বর্ধমান: দিনভর জেরার পর গ্রেপ্তার করা হল সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকার কয়েন লোপাটে অভিযুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিক তারক জয়সওয়ালকে। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই জেরা করেন পদস্থ পুলিশ কর্তারা। সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে মেমারি থানার পুলিশ। শনিবার তাঁকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেরায় তারক ওই বিপুল অঙ্কের কয়েন সরিয়েছে বলে স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের।

তারক ওই কয়েন কাকে দিয়েছে বা কোথায় রেখেছে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বাড়িতে কয়েনের হদিশ মেলেনি। তাহলে কী ওই কয়েন অন্য কাউকে দিয়েছে তারক তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি, একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে লটারি টিকিট কাটার নেশা ছিল। সেই কারণে তার দেনা হয়েছিল বলেও জানা যাচ্ছে। সেই দেনা শোধ করতে ওই কয়েন সরানো হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে পুলিশ কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না। কীভাবে টাকা সরানো হয়েছে তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। একদিনে ওই বিপুল অঙ্কের কয়েন সরানো কার্যত অসম্ভব। সেক্ষেত্রে ধরা পড়ে যাওয়া বা কারওর নজরে পড়ার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে গত এক বছর ধরে বিভিন্ন সময় ওই কয়েন অল্প অল্প করে সরানো হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে আর কেউ জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ব্যাংক ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের রাজবাটি শাখায় আগে কর্মরত ছিলেন তারক। শহরের বাদামতলা এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রায় এক বছর আগে মেমারির ওই শাখায় বদলি হয়ে যান তিনি। ব্যাংকের ভল্ট ও অ্যাকাউন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর ব্যাংকে ইন্টারনাল অডিট হয়। সেই সময় বিপুল অঙ্কের গরমিল ধরা পড়ে। সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকার কয়েনের হদিশ মিলছিল না। সেই সময় তারকও কয়েনের হিসেব দিতে পারেননি। গত ২৯ নভেম্বর থেকে তিনি আচমকাই ব্যাংকে যাওয়া বন্ধ করে দেন। ওইদিন স্ত্রীকে দিয়ে ব্যাংকের ভল্টের চাবি পাঠিয়ে দেন তিনি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান তিনি অসুস্থ। তার পর আর ব্যাংকে যাননি তিনি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্তে নামে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বর্ধমানের আঞ্চলিক অধিকর্তা তরুণকুমার সাহা মেমারি থানায় তারকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে নামে মেমারি থানার পুলিশ। শুক্রবার ব্যাংকের শাখায় তদন্তে যান পুলিশ কর্তারা। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, সার্কেল ইনস্পেক্টর, মেমারি থানার ওসি ছিলেন তদন্তকারী দলে। ব্যাংকের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। দুপুরের দিকে ব্যাংকের শাখায় আসেন তারক। শাখার ম্যানেজারের ঘরে বসিয়ে তাঁকে দফায় দফায় জেরা করেন পুলিশকর্তারা। সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয় তারককে। পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় ব্যাংকের সাড়ে ৮৪ লক্ষ কেন সরালেন জানতে চাইলে নিরুত্তর ছিলেন তারক। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ধৃতকে জেরা করে কয়েনের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। আর কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।