কেমন ফাঁস দিলে কেমন দাগ? রজত খুনের আগে ইন্টারনেটে সার্চ করেছিলেন অনিন্দিতা

স্ত্রী অনিন্দিতার সঙ্গে আইনজীবী রজত দে।

মৃতের গলায় দাগের 'অস্বাভাবিকতা' নিয়ে গোয়েন্দাদের ধন্দ বাড়ল বলা যায়। কারণ, বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দারা সম্প্রতি জানতে পেরেছেন, ইন্টারনেটে ফাঁস দিয়ে মৃত্যু হলে কেমন দাগ হতে পারে, তার ব্যাখ্যা খুঁজেছিলেন নিউ টাউনের আইনজীবী রজত দে-র স্ত্রী অনিন্দিতা! অথচ এ প্রসঙ্গে বারবার বিভ্রান্ত করছেন নিহতের স্ত্রী।

এই সাইবার তথ্যপ্রমাণকে হাতিয়ার করে এ বার গোয়েন্দাদের দাবি, পরিকল্পনা করেই স্বামীকে খুন করেছেন তিনি। এ ছাড়াও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। রবিবার এই সব তথ্য আদালতের সামনেও তুলে ধরেছেন মামলার সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সাইবার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। সে সবের ভিত্তিতে স্পষ্ট হচ্ছে খুনের পরিকল্পনাও। যদিও অনিন্দিতার আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগের দাবি, পুলিশ গল্প ফেঁদে অনিন্দিতাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ দিন দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক অনিন্দিতাকে ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। 

২৫ নভেম্বর রাতে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে রজতের দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যার তত্ত্ব উঠে এলেও ময়না-তদন্তের পরে চিকিৎসক এটি খুনের ঘটনা হতে পারে বলে পুলিশকে জানান। তদন্তকারীরা জানান, গোড়া থেকেই অনিন্দিতার বয়ানে বিভ্রান্তি ছিল। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাই ১ ডিসেম্বর তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতাকে গ্রেফতার 
করা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম থেকে রজতের গলায় ফাঁসের দাগ নিয়েই ধন্দ ছিল। তা নিয়ে অনিন্দিতাকে জেরাও করা হয়। কিন্তু স্পষ্ট ব্যাখ্যা 

মেলেনি। অনিন্দিতার মোবাইল ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে তদন্তকারীরা সেগুলি ঘেঁটেছেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে, কী ভাবে ফাঁস পড়লে কেমন দাগ হতে পারে, ওই সময়ে তা নিয়ে ইন্টারনেটে রীতিমতো পড়াশোনা করেছেন তিনি। পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, এই পড়াশোনাই তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। খুলে যায় রহস্যের জট।

পুলিশ সূত্রের দাবি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল ছিল। রজতের বাবা সমীর দে পুলিশকে জানিয়েছেন, অনিন্দিতা রজতের উপরে নির্যাতন করতেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে রজত দেখা করতে এলে হেলমেট পরে থাকতেন। কারণ হেলমেট খুললে তাঁরা কয়েক বার মুখে, গলায় মারধরের চিহ্ন দেখেছেন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, রজত ও অনিন্দিতার এক পরিচারিকার কাছ থেকেও দু'জনের সম্পর্কের কিছু তথ্য মিলেছে। পরিচারিকার গোপন জবানবন্দি আদালতে নথিভুক্ত করানো হয়েছে। 
পুলিশ সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়েছে এবং এক জন নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে গোটা পুনর্নির্মাণের প্রতিটি দৃশ্য 'স্কেচ' করানো হয়েছে। অনিন্দিতার কৌঁসুলির বক্তব্য, ময়না-তদন্ত ভি়ডিয়োগ্রাফি করা হয়েছিল। কিন্তু পুনর্নির্মাণের ঘটনা ভি়ডিয়োগ্রাফি করানো হল না কেন? পুলিশের পাল্টা বক্তব্য, ভিডিয়োগ্রাফি করাতেই হবে, এমন নির্দিষ্ট বিধি নেই। নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে 'স্কেচ' করানো যেতেই পারে।

চন্দ্রশেখরবাবু বলছেন, ''রজতের বাবার অভিযোগ এবং এফআইআরের বয়ান দেখলে, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দাঁড়ায়। তার উপরে ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও আসেনি। শুধু ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের মতের ভিত্তিতে খুন বলা যায় না।'' তাঁর দাবি, ''অনিন্দিতার জবানবন্দি জোর করে আদায় করেছে পুলিশ।''