বালিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ টাকার বেআইনি কারবারের অভিযোগ বাঁকুড়ায়


বাঁকুড়া: এই মুহূর্তে 'বালি'কে কেন্দ্র করেই লক্ষ লক্ষ টাকার 'বেআইনি' কারবার চলছে বাঁকুড়ায়। আর পুলিশের হাতে নগদ টাকা ধরিয়ে দিলেই সেই 'বেআইনি' কারবারই সঙ্গে সঙ্গে তা 'আইনি' বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। জেলা জুড়ে খোদ বালি বোঝাই লরি চালকদের একাংশ এমন দাবি করছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে 'তোলা' তোলার অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু এর ফলে প্রতিদিন যেভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে তার দায় কে নেবে। প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।

প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া ধমকের পরেও নদীগর্ভ থেকে জে.সি.বি দিয়ে বালি তোলার কাজ থেমে নেই। আইনি বালি খাদানগুলিতে 'বেআইনি'ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা যেমন হচ্ছে, তেমনি বেআইনি খাদান থেকেই সরকারি রাজস্ব ক্ষতি করে দিনের পর দিন চলছে বালি লুঠ। আর এই কাজে প্রশাসনের একাংশ জড়িত। এমনটাই বাঁকুড়ার বিভিন্ন অংশে বারবার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

জেলার বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুরের দ্বারকেশ্বর নদী থেকে দিনে দুপুরে অবৈধবাবে অবাধে চলছে বালি পাচার। এই 'অবৈধ' বালিই পুলিশের সৌজন্যে কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। আর তার ফল ভোগ করছেন গ্রামের নিরীহ মানুষ। অবাধে বালি লুঠের ফলে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি একের পর এক নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি অতিরিক্ত বালি বোঝাই লরি দিনের পর দিন গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ফলে সেই রাস্তা সহজেই ভেঙ্গে পড়ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে অসহায় গ্রামবাসীদের।

বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর এলাকার দ্বারকেশ্বর নদী থেকে বালি তুলে তা সহজেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আর এই কাছটা 'সহজে' সম্ভফ হচ্ছে মূলত: পুলিশেরই সৌজন্যে। বালি পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত লরি চালকদের অভিযোগ, বালি নিয়ে যাতায়াতের পথে পড়া প্রতিটি থানাতেই 'নগদ' টাকা দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত বালি বোঝাইয়ের কথা বলে 'জরিমানা' আদায় করা হলেও কোথাও পুলিশের পক্ষ থেকে রসিদ দেওয়া হয়না বলে লরি চালকরা স্পষ্টতই অভিযোগ করছেন। আর সে কারণে লরি আটকানোর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তৈরী হচ্ছে যানযট। ফলে আইনের রক্ষকদের হাত ধরেই বেআইনি কাজ যেমন হচ্ছে, তেমনি সরকারি কোষাগারে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব জমা পড়ছে না বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলার বেশ কিছু অংশে বালি বোঝাই লরির ওপর নজরদারি সিসিটিভি বসানো হলেও ওভারলোডিং লরি পারাপার চলছে পুরোদমে! জেলার বেশ কিছু অংশে সিসিটিভি বসিয়ে কার কি লাভ হচ্ছে, ভেবে পাচ্ছেন না কেউ। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সুনীল ধাড়া নামে এক বালি বোঝাই লরি চালক বলেন, প্রতি দিনই বালি নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশকে নগদ টাকা দিতে হয়। সেই পরিমান দু'শো-চারশো থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত্য হতে পারে। অতিরিক্ত বালি বোঝাই থাকার কারণে পুলিশ মুখে 'জরিমানা'র কথা বললেও কোন রসিদ দেয়না বলে তিনি অভিযোগ করেন। বাবু শ্রীবাস্তব নামে অন্য আর এক লরি চালক বলেন, বালি খাদান থেকে বালি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চার হাজার টাকা মতো 'পুলিশ খরচ' লাগে। আবার গন্তব্যে পৌঁছানোর পরেও সেখানকার পুলিশকেও আবার টাকা দিতে হয়। আর টাকা না দিলে 'কেস দেওয়ার হুমকি' দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে বিষ্ণুপুর পুলিশের পক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মহকুমা শাসক মানস মন্ডল বলেন, পুলিশ, ভূমি সংস্কার ও মোটর ভ্যাহিক্যাল দপ্তরের পক্ষ থেকে চেক পোষ্ট গুলিতে যৌথভাবে নজরদারির পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়াও যেকোন সূত্র থেকে এবিষয়ে খবর পেলেই তৎক্ষনাৎ হাতে নাতে ধরার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।